Bahumatrik | বহুমাত্রিক

সরকার নিবন্ধিত বিশেষায়িত অনলাইন গণমাধ্যম

বৈশাখ ৬ ১৪৩১, শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪

‘অহন কেউ ভেজাল ওষুধও দেয় না-ঠকাতেও পারে না’

বিশেষ প্রতিবেদক

প্রকাশিত: ২০:৪৭, ২০ এপ্রিল ২০১৭

আপডেট: ২১:৪৪, ২০ এপ্রিল ২০১৭

প্রিন্ট:

‘অহন কেউ ভেজাল ওষুধও দেয় না-ঠকাতেও পারে না’

ছবি : ‘প্রতীক’র সৌজন্যে

ঢাকা : ‘‘আগে ভুট্টা কী করে সঠিকভাবে চাষ করতে অইতো-তা জানতাম না। ক্ষেতে পোকামাকড়ের আক্রমণ অইলে কী ওষুধ দিতে অইব তা জানতাম না। কহন ওষুধ দিতে অইব তা-ও জানতাম না। অ্হন ‘প্রতীক’ প্রজেক্টের মোবাইল ফোন অ্যাপস ব্যবহার কইরা সব জানি। ডাক্তারাও আর ভেজাল ওষুধ দেয় না। কেউ ঠেকাইতে পারে না’’

-বলছিলেন নীলফামারীর ক্ষুরিবাড়ি গ্রামের ভুট্টা চাষি রোজিনা আক্তার (৩০)।কৃষি উৎপাদন সহায়ক মোবাইল ফোন অ্যাপস পেয়ে তাঁর মতোই সচেতন হয়ে উঠেছেন অন্যান্য চাষিরা। বিশেষ করে চার দেয়ালে আবদ্ধ থেকে যারা তাদের সক্ষমতাই ভুলে গিয়েছিলেন-স্মার্ট ফোন ও অ্যাপসের ব্যবহার তাদের দৃষ্টি খুলে দিয়েছে।

বৃহস্পতিবার ‘পার্টিসিপেটরি রিসার্চ অ্যান্ড ওনারশিপ উইথ টেকনোলজি ইনফরমেশন অ্যান্ড চেঞ্জ(প্রতীক)’ প্রকল্পের আয়োজনে ‘ইন্টার্যােক্টিভ মোবাইল ফোন ইনফরমেশন অ্যান্ড কমিউনিকেশন সিস্টেম ফর রুর্যারল ওমেন ইন বাংলাদেশ’ শীর্ষক সেমিনারে যোগ দিয়ে এসব অভিজ্ঞতা তুলে ধরেন রোজিনা।

নীলফামারীর দক্ষিণ ক্ষুরিবাড়ি গ্রামের নারী কৃষকদের প্রযুক্তির সহজ ব্যবহারের মাধ্যমে তাদের জীবনমান উন্নয়নের এই প্রকল্প ‘প্রতীক’ যৌথভাবে বাস্তবায়ন করছে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়, অক্সফাম বাংলাদেশ ও মোনাস বিশ্ববিদ্যালয়।

রাজধানীর ফার্মগেটের কৃষিবিদ ইনস্টিটিউশন বাংলাদেশ এর সেমিনার কক্ষে দিনব্যাপি এই আয়োজনের উদ্বোধনী পর্বে অংশ নিয়ে দক্ষিণ ক্ষুরিবাড়ির আরেক কৃষাণি আঙুরি বেগম তাঁর অভিজ্ঞতা তুলে ধরে বলেন, ‘‘আগের চেয়ে আমরা অহন আগাইয়া গেছি। অহন অনেক কিছু জানি। আশপাশের মানুষও আমার কাছে আইসা বলে-তাদেরকেও শিখাইয়া দিতে। নিজের কাম নিজেরাই করতে জানি। কল সেন্টারে ফোন দিয়া ওষুধের নাম জাইনা লই। গরুর এলার্জি হলেও বুঝতাম পারি।’’

টানা দুই বছর মাঠ পর্যায়ে গবেষণা ও সমীক্ষার ভিত্তিতে সেখানকার জনগোষ্ঠির জন্য সন্নিবেশিত আঞ্চলিক ভাষায় নির্মিত সহজবোধ্য মোবাইল ফোন অ্যাপসের আনুষ্ঠানিক উন্মোচনও করা হয় বৃহস্পতিবারে অনুষ্ঠিত সেমিনারের উদ্বোধনী পর্বে।

প্রধান অতিথি হিসাবে সেমিনারের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী তারানা হালিম।

অনুষ্ঠানে অংশ নেওয়া নারী কৃষকদের অগ্রগতির গল্প শুনে আনন্দিত প্রতিমন্ত্রী বলেন, ‘দেশের কৃষিচর্চায় অনেক আগে থেকেই নারীরা ঘনিষ্টভাবে যুক্ত ছিলেন। কিন্তু তাদের স্বীকৃতি ছিল না। তারা অলক্ষ্যেই থেকে যেতেন। প্রযুক্তি-বিশেষ করে মোবাইল ফোন-কিংবা বিশেষায়িত অ্যাপসের ব্যবহার গ্রামের নারীদেরকেও ক্ষমতায়িত করেছে।’

ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়তে সরকারের বহুমুখি পদক্ষেপের কথা তুলে ধরে তিনি বলেন, ‘এটুআই প্রকল্পের মাধ্যমে বিভিন্ন প্রযুক্তিগত উদ্ভাবনী ক্ষেত্রে আমরা সহায়তা করছি। ক্রমান্নয়ে আমরা ই-এডুকেশন, ই-এগ্রিকালচার, ই-হেলথ এ সম্প্রসারিত হচ্ছি। জীবনযাত্রায় এসব প্রযুক্তির ব্যবহার আমুল ইতিবাচক পরিবর্তন নিয়ে আসছে।’

তারানা হালিম বলেন, ‘কৃষক পর্যায়ে মোবাইল ফোন অ্যাপসের ব্যবহার যাতায়াত খরচ কমাচ্ছে, সময় বাঁচাচ্ছে, একইসঙ্গে মধ্যসত্বভোগীদের দৌরাত্মও কমাচ্ছে।’

দেশ তথ্যপ্রযুক্তিতে অচিরেই আরও অগ্রগতির দিতে ধাবিত হচ্ছে জানিয়ে তিনি বলেন, ‘সব উপজেলায় অপটিক্যাল ফাইবার যাচ্ছে। ডিজিটাল ভিলেজ প্রকল।প নিয়েছে সরকার। বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইটের মাধ্যমে আমরা এক্ষেত্রে আরও বহুদূর এগিয়ে যাব। আমাদের চাহিদা ৩০০ জিবিপিএস এখনো অতিক্রম করতে পারেনি। সেক্ষেত্রে আমরা ব্যান্ডউইথ রপ্তানির কথাও ভাবছি।’

‘দেশের সকল নারী-পুরুষের হাতে মোবাইল ফোন তুলে দিতে সরকার শতভাগ ফোন সেট দেশেই উৎপাদনের কথা ভাবছে। ফোন উৎপাদনের কাঁচামাল অন্তত করমুক্ত করা গেলে মাসিক ৫০ টাকা কিস্তিতেও ফোন দেয়া সম্ভব।দেশিয় ফোন প্রস্তুতকারক প্রতিষ্ঠানও এবিষয়ে সম্মত হয়েছে’-জানান ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী।

সেমিনারের সভাপতি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান কৃষি বিশ্ববিদ্যালযয়ের তথ্য, যোগাযোগ এবং প্রযুক্তি বিভাগের অধ্যাপক ও এ ‘প্রতীক’র বিশ্ববিদ্যালয় ফোকাল পয়েন্ট মোঃ রশিদুল হাসান বলেন, ‘বাংলাদেশ যেখানে সব ক্ষেত্রে এগিয়ে যাচ্ছে-সেখানে গ্রামের কৃষক কেন পিছিয়ে থাকবে? তাই আমরা কৃষকদের চাষাবাদের সমস্যা সমাধানভিত্তিক মোবাইল ফোন অ্যাপ্লিকেশন তৈরী করেছি। সেখানে স্পষ্ট ছবি ও আঞ্চলিক ভাষার ব্যবহারের মাধ্যমে সমস্যা এবং সমাধানসূত্র তুলে ধরা হয়েছে। পর্যায়ক্রমে এসব বিষয় গেমস আকারে বানিয়েও কৃষকদের মাঝে দিতে চাই আমরা। যাতে আরও আগ্রহী হয়ে কৃষকরা এটি ব্যবহার শিখে এবং কাজে লাগায় শস্য উৎপাদনে।’

সেমিনারে মুল প্রবন্ধ পাঠ করেন অস্ট্রেলিয়ার মোনাশ ইউনিভার্সিটির সিনিওর রিসার্চ ফেলো ড. ল্যারি স্টিলম্যান, শেরে বাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য অধ্যাপক ড. সেকান্দার আলী, অক্সফাম বাংলাদেশের প্রোগ্রাম ডিরেক্টর এম বি আখতার, হাজী দানেশ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগের অধ্যাপক ড. সাইফুল হুদা এবং অক্সফাম বাংলাদেশের আইসিটি এবং ডেভলাপমেন্ট কো-অর্ডিনেটর তাপস রঞ্জন চক্রবর্তী। অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন ‘প্রতীক’র রিসার্চ ফেলো এনামুল হক পলাশ। 

বহুমাত্রিক.কম

Walton Refrigerator Freezer
Walton Refrigerator Freezer