Bahumatrik | বহুমাত্রিক

সরকার নিবন্ধিত বিশেষায়িত অনলাইন গণমাধ্যম

বৈশাখ ১১ ১৪৩১, বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪

অস্থিত্ব সংকটে লাউয়াছড়া: বন্যপ্রাণির খাবার সংকট

নূরুল মোহাইমীন মিল্টন, নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশিত: ২১:০৯, ২৫ অক্টোবর ২০১৬

আপডেট: ২৩:৩৮, ২৫ অক্টোবর ২০১৬

প্রিন্ট:

অস্থিত্ব সংকটে লাউয়াছড়া: বন্যপ্রাণির খাবার সংকট

মৌলভীবাজার: মৌলভীবাজারের লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যানের বনে গাছ গাছালি কমে অস্থিত্ব সংকটে পড়ছে।

উদ্যান এলাকার গাছ-বাঁশ চুরি, গ্যাস কূপ খনন, বন্যপ্রাণির খাবার ও আবাসস্থল সংকট, রেল ও সড়ক পথে প্রাণি মারা যাওয়া, ভূমি বেদখল হওয়া, বনের ভেতরে লেবু, আনারস চাষাবাদ, অত্যধিক পর্যটক সব মিলিয়ে সংকটাপন্ন অবস্থা দেখা দিয়েছে। খাবার ও বাসস্থান সংকটে বন্যপ্রাণিও সংকটাপন্ন হয়ে পড়েছে।

বিশ্বের বিলুপ্তপ্রায় উল্লুকসহ বিরল প্রজাতির বন্যপ্রাণি, উদ্ভিদ ও বৃক্ষরাজি সমৃদ্ধ এই বন নিয়ে এখন স্থানীয়দের ভাবিয়ে তুলেছে।

মঙ্গলবার বেলা ১১টায় কমলগঞ্জ পৌরসভা মিলনায়তনে বাংলাদেশ পরিবেশ আইনবিদ সমিতি (বেলা) কর্তৃক আয়োজিত লাউয়াছড়া বন বিষয়ে মতবিনিময় সভায় আলোচকরা এসব উদ্বেগ ও উৎকন্ঠার কথা তুলে ধরেন।

লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যান সহ-ব্যবস্থাপনা কমিটির সভাপতি মোসাদ্দেক আহমদের সঞ্চালনায় মতবিনিময় সভায় আলোচক হিসাবে উপস্থিত ছিলেন বন্যপ্রাণী ব্যবস্থাপনা ও প্রকৃতি সংরক্ষণ বিভাগের সহকারী বন সংরক্ষক মো. তবিবুর রহমান, কমলগঞ্জ পৌরসভার মেয়র মো. জুয়েল আহমদ, বাংলাদেশ পরিবেশ আইনবিদ সমিতি বেলা’র সিলেট বিভাগীয় সমন্বয়ক এড. শাহ সাহেদা আক্তার, আদিবাসী খাসিয়া পুঞ্জি প্রধান জিডিসন সুচিয়াং, মনিপুরী সমাজ সেবক আনন্দ মোহন সিংহ, লাউয়াছড়া বনরেঞ্জ কর্মকর্তা শাহাব আলী, সাংবাদিক নূরুল মোহাইমীন মিল্টন, সাজিদুর রহমান, সৈয়দ মহসিন পারভেজ, স্থানীয় নেতা আসিদ আলী, কমলগঞ্জ থানার সহকারী পরিদর্শক জাহিদুল হক প্রমুখ নেতৃবৃন্দ।

মতবিনিময়কালে বন্যপ্রাণী ব্যবস্থাপনা ও প্রকৃতি সংরক্ষণ বিভাগের লাউয়াছড়া রেঞ্জ কর্মকর্তা মো. সাহাব আলী বলেন, কয়েক বছর পূর্বেও লাউয়াছড়ায় যে বন ছিল সেটি এখন আর নেই।

উদ্যানে ক্লোরোফর্ম গাছটিও নেই। কালের সাক্ষী হয়ে গাছের গোড়া রয়েছে। যে সময়ে চন্দন, ক্লোরোফর্ম, আগর, সেগুন, চাপালিশ প্রজাতির বৃহদাকার গাছ ছিল সেগুলো এখন আর নেই। গাছ-বাঁশ চুরি হয়ে বন ফাঁকা হয়ে যাচ্ছে। তিনি আরও বলেন, উদ্যানে দুটি খাসিয়া পুঞ্জির লোকজন বসবাস করছেন এবং গাছের ডগা ও ডাল কেটে পান চাষাবাদ করছেন এটিও বনের ক্ষতি করছে। ট্রেনের ধাক্কায় কিংবা সড়কপথে সাপ, শূকর, শিয়াল, বানরসহ হরদম বিভিন্ন প্রাণি মারা যাচ্ছে।

লাউয়াছড়া উদ্যানের পার্শ্ববর্তী গ্রামের নেতা আসিদ আলী বলেন, বনে খাবার সংকটে পড়ে রাতে শোকর, বানরসহ বিভিন্ন প্রাণি গ্রামগঞ্জে ঝাপিয়ে পড়ে। এরা কৃষকের ক্ষেতের ধান ও সবজি বিনষ্ট করছে। এছাড়াও ১৯৯৭ সালে মাগুরছড়া গ্যাসকূপ বিস্ফোরনে গাছগাছালি মারা যাওয়ায় প্রকৃতির মারাত্মক ক্ষতির শিকার হয়েছে। লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যান সহ-ব্যবস্থাপনা কমিটির সভাপতি মোসাদ্দেক আহমদে বলেন, বিভিন্নভাবে লাউয়াছড়া বনের গাছগাছালি ও প্রাণি সমুহকে মানুষ আঘাত করছে।

ফলে বন থেকে বেরিয়ে প্রাণি রাতে গ্রামে বস্তিতে গিয়ে পাল্টা আঘাত করছে। এক প্রশ্নের জবাবে মোসাদ্দেক আহমদ বলেন, লাউয়াছড়া উদ্যান এলাকায় যেভাবে গ্যাস উত্তোলন হচ্ছে তাতে টিলায় ভূমিধ্বস, ফাটলসহ পরিবেশের ব্যাপক ক্ষতি বয়ে আনতে পারে। কমলগঞ্জ থানার সহকারী পরিদর্শক জাহিদুল হক বলেন, উদ্যানের পার্শ্ববর্তী স্থানে গাছ চুরির মামলায় ওয়ারেন্টভূক্ত অনেক আসামী ধরা পড়েছে। এরা বনআইনের মামলায় দ্রুত জামিনে বেরিয়ে এসে আবার গাছ চুরির সাথে সম্পৃক্ত হচ্ছে। বনআইনে এদের বিরুদ্ধে কঠোর মামলা দেওয়া উচিত বলে তিনি মন্তব্য করেন।

খাসিয়া পুঞ্জির মন্ত্রী জিডিসন সুচিয়ান বলেন, বনের গভীরতা কমে যাওয়ায় প্রাণির বাসস্থান ও খাবারে সমস্যার সৃষ্টি হচ্ছে। শুষ্ক মৌসুমে বনে প্রাণি খাবার পানি সংকটে পড়ে। মেয়র জুয়েল বলেন, গাছ শেষ হওয়ার সাথে সাথে প্রকৃতিও শেষ হয়ে লাউয়াছড়া তার যৌবন হারিয়ে ফেলছে। রেল ও সড়কপথে প্রতিনিয়ত প্রাণি মারা যাওয়ার খবর বেরুচ্ছে। এসব অপতৎপরতা থেকে অচিরেই উত্তরণ ঘটিয়ে লাউয়াছড়া বন রক্ষায় সবাইকে এগিয়ে আসতে হবে। সাংবাদিকসহ অন্যান্যরা বলেন, জাতীয় উদ্যানের সীমানার অনেক স্থানই বেদখল হয়ে গেছে। উদ্যানের ভেতরেই লেবু, আনারসসহ বিভিন্ন ধারনের চাষাবাদ হচ্ছে। বনের আশে পাশে টিলাভূমিতে বিভিন্ন স্থাপনা তৈরি হচ্ছে। এভাবে চর্তুমুখী সমস্যায় জর্জরিত হয়ে লাউয়াছড়া অস্থিত্ব সংকটে ভূগছে।

এ অবস্থা থেকে উত্তরনে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গহন করা উচিত।

১৯৯৬ সালে ১২৫০ হেক্টর জায়গা নিয়ে লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যান ঘোষণা করা হয়। বিশ্বের বিলুপ্ত প্রায় জীববৈচিত্র্যময় বন গবেষণা কেন্দ্রসহ এই উদ্যানে রয়েছে বিলুপ্তপ্রায় বন্যপ্রাণির বিচরন।লাউয়াছড়ায় ৪৬০ প্রজাতির প্রাণ বৈচিত্র্যের ভেতর ১৬৭ প্রজাতির উদ্ভিদ, ৪ প্রজাতির উভয়চর প্রাণী, ৬ প্রজাতির সরিসৃপ, ২৪৬ প্রজাতির পাখি, ২০ প্রজাতির স্তন্যপ্রায়ী প্রাণী এবং ১৭ প্রজাতির পোকামাকড় রয়েছে।

বহুমাত্রিক.কম

Walton Refrigerator Freezer
Walton Refrigerator Freezer