Bahumatrik | বহুমাত্রিক

সরকার নিবন্ধিত বিশেষায়িত অনলাইন গণমাধ্যম

চৈত্র ১৪ ১৪৩০, শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪

অভিবাসন ইস্যুতে মুখোমুখি বিচারবিভাগ-ট্রাম্প

ড. মো. হুমায়ুন কবীর

প্রকাশিত: ০০:৫৭, ১২ ফেব্রুয়ারি ২০১৭

আপডেট: ০১:৪০, ১২ ফেব্রুয়ারি ২০১৭

প্রিন্ট:

অভিবাসন ইস্যুতে মুখোমুখি বিচারবিভাগ-ট্রাম্প

ঢাকা : আড়ম্বরে দায়িত্ব গ্রহণের একমাস যেতে না যেতেই যুক্তরাষ্ট্রের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ইস্যু অভিবাসন নিয়ে বিচার বিভাগের সাথে মুখোমুখি অবস্থানে ট্রাম্প প্রশাসন। যুক্তরাষ্ট্র পৃথিবীর বুকে এমন একটি দেশ যেখানে মানুষের মৌলিক অধিকারগুলো প্রাপ্তির ক্ষেত্রে কোন অসুবিধা হয় না।

সেখানে অর্থনৈতিক অবস্থা ভালো হওয়ার কারণে শিক্ষা, শিল্প, সংস্কৃতি ইত্যাদি প্রতিটি ক্ষেত্রেই মানুষ নিশ্চিন্তে বসবাস করতে পারে। আর এটি সম্ভব হয়েছে সেখানে বসবাস করা অভিবাসীদের রক্ত-ঘামে। চর্তুদশ শতকে কলম্বাসের অ্যামেরিকা আবিষ্কারের পর থেকে সেখানে অভিবাসীদের বসবাস শুরু হয়। তখন খেকেই সেখানে অভিবাসীদের অবদানেই গড়ে উঠেছে আজকের আধুনিক সুযোগ-সুবিধাসম্পন্ন আমেরিকা। সেজন্যই অ্যামেরিকা তাদের নিজেদের প্রয়োজনেই অনুন্নত বিশ্ব থেকে বুদ্ধিবৃত্তিক, শ্রমজীবী, ব্যবসায়ী, প্রযুক্তিবিদ, বিজ্ঞানী, শিক্ষার্থী প্রভৃতি ক্যাটাগরিতে অভিবাসন আহবান করে থাকে।

সারাবিশ্বের মানুষের জন্য যুক্তরাষ্ট্রে অভিবাসন পাওয়া একটি স্বপ্নের মতো। এটি যেন যেকোন একটি সম্মানজনক কিংবা লোভনীয় চাকুরি পাওয়া থেকেও গুরুত্বপূর্ণ। শুধু তাই নয়, নব্বইয়ের দশকে ভিসা পদ্ধতি সহজীকরণের কারণে অস্ট্রেলিয়া, নিউজিল্যান্ড, কানাডাসহ আরো কয়েকটি ইউরোপীয় দেশে বাংলাদেশ থেকে সেসব দেশে অভিবাসী হওয়ার হিড়িক পড়ে গিয়েছিল। তখণ বিশ্বদ্যিালয়ের অধ্যাপক থেকে শুরু করে বিসিএসসহ বিভিন্ন স্থায়ী সরকারি চাুরি ছেড়েও চলে যেতে দেখা গেছে। রাষ্ট্রীয় অভিবাসন ভাষায় একে ব্রেইন ড্রেইনও বলা হয়ে থাকে।

যুক্তরাষ্ট্রে যাওয়ার জন্য তখন বৈধ পথটি খুবই কঠিন ছিল। নির্ধারিত কিছু কাজ ও উপলক্ষ ছাড়া সহজে কাউকে ভিসা দেওয়া হতো না। কিন্তু তারপরেও বাংলাদেশসহ বিশ্বের অপেক্ষাকৃত অর্থনৈতিকভাবে দুর্বল দেশগুলো হতে প্রচুর লোক যুক্তরাষ্ট্রে বৈধ কিংবা অবৈধ পথে যাওয়ার চেষ্টা করত। আমরা তখন কেবল এইচএসসি পরীক্ষা দিয়েছি। ১৯৮৭-৮৮ সালে প্রথম বাংলাদেশসহ বিশ্বের কয়েকটি দেশের জন্য অভিবাসন কোটা নির্ধারণ করে যুক্তরাষ্ট্রের স্টেট ডিপার্টমেন্ট।

তখন বিজ্ঞপ্তি প্রচার করা হয় যুক্তরাষ্ট্রে বৈধভাবে সপরিবারে নাগরিকত্ব প্রদানের জন্য। লটারির মাধ্যমে সর্বপ্রথম ‘ওপি-১’ নামে চালু করা হয় সহজ অভিবাসন পদ্ধতি। সেখানে নির্ধারিত ফরমে আবেদন করে আমাদের দেশের অনেক বাঙালি তখন ওপি-১ ভিসা প্রক্রিয়ার আওতায় সিঙ্গেল এবং সপরিবারে অভিবাসী হওয়ার সুযোগ হয়েছিল। এগুলোর একটি বিশেষত্ব ছিলো কোন ধরনের প্রতিযোগিতা ছাড়ই শুধুমাত্র লটারির মাধ্যমেই নির্ধারিত প্রক্রিয়ার মাধ্যমে ভিসা পাওয়ার সুযোগ হতো।

ওপি-১ এর পরের বছর থেকে প্রতিবছরের একটি নির্ধারিত সময় ‘ডাইভার্সিটি ভিসা’ (ডিভি) নামে নিয়মিত যুক্তরাষ্ট্রে বৈধ অভিবাসনের সুযোগ চলতে থাকে যা গত দুয়েক বছর থেকে বন্ধ রয়েছে। সেটি চূড়ান্তভাবে বন্ধ করার জন্য ট্রাম্পের রিপাবলিকান দলীয় দুজন সিনেটর- আরাকানসের টম কটন এবং জর্জিয়ার ডেভিড পারডিউ গত ৭ ফেব্রুয়ারি ২০১৭ তারিখে সিনেটে ডিভি লটারি বিলপ্তির জন্য একটি বিল উত্থাপন করেন। প্রতিবছর বিশ্বেও বিভিন্ন দেশ থেকে প্রায় ৫০ হাজার অভিবাসী এ ডিভি লটারিরি মাধ্যমে যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশের সুযোগ পায়। এ প্রস্কাব পাস হওয়ার পর এ সুযোগটি বন্ধ হয়ে যাবে। এছাড়া গ্রিনকার্ড পাওয়া অভিবাসীরা কেবল তাদেও স্বামী-স্ত্রী, অপ্রাপ্ত বয়স্ক সন্তান এবং অসুস্থ বাবা-মাকে নাগরিক করার আবেদন করতে পারবেন। পারিবারিক কোটার সুবিধা নিয়ে এতদিন গ্রিনকার্ডধারীরা তাদেও ভাই-বোন এবং ঘনিষ্ট আত্মীয়দেরও যুক্তরাষ্ট্রে নাগরিক হিসেবে নিয়ে আসতে পারতেন।

যুক্তরাষ্ট্রে এভাবে প্রতিবছর ৫ থেকে ১০ লাখ লোক অভিবাসী হওয়ার সুযোগ পেত। নতুন ডিভি বিলুপ্তিকরণ বিলটি সিনেটে অনুমোদিত হলে এ সংখ্যা বহুলাংাশে কমে আসবে। তবে অনেকে মনে করেন পেশাধারী ভিসায় যুক্তরাষ্ট্রে অভিবাসীদের ক্ষেত্রে এর কোন প্রভাব ফেলবে না। এ বিলকে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের অভিবাসী বিষয়ে দেওয়া নির্বাহী আদেশের একটি ধারাবাহিকতা হিসেবে দেখছেন অনেকে।

যাহোক এসব সহজ ভিসা পদ্ধতির মাধ্যমে বাংলাদেশসহ বিশ্বের বেশ কিছু দেশের লক্ষ লক্ষ লোক যুক্তরাষ্ট্রে অভিবাসী হয়েছে। কিন্তু এর বাইরেও আরো লক্ষ লক্ষ লোক সেখানে অবৈধ হিসেবেও বসবাস করছে। যুক্তরাষ্ট্রের নির্বাচনে তাই অভিবাসী নীতি অনেক প্রভাব ফেলে থাকে। আর মূল ক্ষমতার অংশীদার হিসেবে প্রধান দুটি দল ডেমোক্রেট এবং রিপাবলিকানদের মধ্যে অভিবাসীদের সুযোগ-সুবিধা ঘোষণা এবং অসুবিধা সৃষ্টির একটি বিপরীতমুখী প্রতিযোগিতা চলতে থাকে।

তবে সেখানে ডেমোক্রেট দল অভিবাসীদের ব্যাপারে অনেক উদারনৈতিক। কারণ তারা মনে করে, যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনীতিতে এসব অভিবাসীদেও অবদান কোনভাবেই খাটো করে দেখার সুযোগ নেই। পক্ষান্তরে রিপাবলিকান দল অভিবাসীদের বিষয়ে সবসময়ই রক্ষণশীল। কারণ তাদের ধারণা অভিবাসীদের জন্যই যুক্তরাষ্ট্রের মূল অধিবাসীরা তাদের বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধা ও অধিকার থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। সেখানে ভাগ বসাচ্ছে অভিবাসীরা। সেজন্য একপ্রকার জাতীয়তাবাদী চেতনার কথা বলে তারা অভিবাসীদের বিরুদ্ধে কথা বলে থাকে এবং তাদের বিরুদ্ধে অবস্থান গ্রহণ করে। সেজন্য নির্বাচনের ফলাফলও এর উপরে অনেকটা নির্ভর করে থাকে।

আর তাই শুরুতেই বিশ্বে ব্যাপক সমালোচনার মুখে পড়েছেন যুক্তরাষ্ট্রের ৪৫ তম প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। আমরা জানি, আগে রাজনীতিতে কোন অভিজ্ঞতা না থাকা ট্রাম্পের মাত্র এক বছরের মনোনয়ন প্রক্রিয়ার মাধ্যমে বনে যান বিশ্বের সবচেয়ে ক্ষমতাধর ও শক্তিশালী রাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট। সে নিয়ে অনেক আলোচনা সমালোচনা হয়েছে বিশ্বময় গণমাধ্যমে। তবে নির্বচানে প্রচারণা চালানোর সময় থেকেই তার বক্তৃতা বিবৃতি ছিল বিভিন্ন মহলের জন্য অত্যন্ত আপত্তিকর ও সমালোচিত।

সেজন্য বিরোধীরা তখন তাকে একহাত নিয়েছেনও। সেসময় তার মুসলিম বিরোধী মনোভাব, অভিবাসন নিয়ে বিরূপ মন্তব্য নারীদের জন্য অবমাননাকর বিভিন্ন বক্তব্য, বিভিন্ন আন্তর্জাতিক জোট, আঞ্চলিক ও উপ-আঞ্চলিক সামরিক, অর্থনৈতিক চুক্তি বিচ্ছিন্ন করা সম্পর্কে উত্তেজনাকর বক্তব্য নির্বাচনের মাঠেও উত্তেজনা ছড়িয়েছিল। আমাদের মনে আছে এর মধ্যে শুধু যুক্তরাষ্ট্রের নয় সারা বিশ্বের জন্য সবচেয়ে আতঙ্কিত হুমকিটি ছিল ২০১৫ সালে প্যারিসে অনুষ্ঠিত কপ-২১ সম্মেলনে স্থিরকৃত জলবায়ু চুক্তিটি বাতিলের প্রশ্নে।

যুক্তরাষ্ট্রের রীতি অনুযায়ী ২০১৬ সালের ৮ নভেম্বর নির্বাচন অনুষ্ঠিত হলেও পরের বছর অর্থাৎ ২০১৭ সালের প্রথম দিকে ২০ জানুয়ারি ডোনাল্ড ট্রাম্প বারাক ওবামার কাছ থেকে আনুষ্ঠানিক প্রেসিডেন্সিয়াল দায়িত্ব গ্রহণ করেছেন। দায়িত্ব গ্রহণের পূর্বে তার বিতর্কিত বক্তব্য সম্পর্কে অনেকের হতাশা থাকলেও এটাকে নির্বাচনের জেতার কৌশল মনে করে কিছুটা আশার আলো দেখেছিলেন। রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকগণ মনে করেছিলেন তিনি এতটা কঠোর অবস্থান গ্রহণ করবেন না। কিন্তু সব আশার গুড়ে বালি হয়েছিল ২০ জানুয়ারি প্রথম দিনেই ঠিক শপথ গ্রহণের পরপরই। কারণ তিনি একদিকে শপথ বাক্যের ফাইলটি হাত থেকে নামালেন অপরদিকে বাতিল করে স্বাক্ষর করলেন দীর্ঘদিন যাবৎ যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিকদের জন্য চলা চিকিৎসা সুবিধা স্বাস্থ্য প্রকল্প ‘ওবামা কেয়ার’।

তারপর একে একে বাতিল করতে লাগলেন ব্যবসা-বাণিজ্যের জন্য আন্তর্জাতিক ‘ট্রান্স প্যাসিফিক পার্টনারশিপ-টিপিপি’ সহ আরো অনেক জনবান্ধব হিসেবে পরিচিত বিভিন্ন চুক্তি। তারই ধারাবাহিকতায় বাতিল করলেন যুক্তরাষ্ট্রে অভিবাসীদের জন্য বর্তমানে চালু থাকা অভিবাসন নীতি। তিনি হয়তো মনে করেছিলেন, নির্বাচনে এসব উত্তাপ ছড়িয়ে যেমনি করে নির্বাচনের দৌড়ে জিতে গিয়েছেন, এসব সিদ্ধান্তের ক্ষেত্রেও তিনি তার দেশের জনগণের সমর্থন পাবেন। কিন্তু তিনি ভুলে গিয়েছিলেন, নির্বাচনে জেতার পরেও লাখ লাখ মানুষ তার বিরুদ্ধে বিক্ষোভ করেছে। এবং তাকে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট হিসেবে দেখতে চান না বলে বিরোধীতা করেছেন। অতি অল্প সময়েই এসব বিক্ষোভ যুক্তরাষ্ট্রের গ-ি ছাড়িয়ে বিশ্বে বিভিন্ন দেশেও ছড়িয়ে গিয়ে ছিল।

সেজন্য ২০ জানুয়ারি ২০১৭ তারিখে শপথ গ্রহণের মাত্র এ সপ্তাহের মাথায় ২৭ জানুয়ারি তারিখে সাতটি মুসলিম দেশ ইরান, ইরাক, লিবিয়া, সোমালিয়া, সুদান, সিরিয়া ও ইয়েমেনের অভিবাসীদের যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশাধিকারে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে নির্বাহী আদেশ জারি করেন ট্রাম্প। সেটা নিয়েই শুরু হয়ে যায় যত বিপত্তি। কারণ যুক্তরাষ্ট্রে অভিবাসনের সাথে বিশ্বের অনেকে দেশের অর্থনৈতিক স্বার্থ জড়িত রয়েছে। অভিবাসীরা যুক্তরাষ্ট্রে অভ্যন্তরীণভাবে যেমন অর্থনীতিতে অবদান রাখে তেমনি অবদান রাখে তাদের প্রত্যেকের নিজ নিজ দেশেও। রেমিট্যান্স নামক অর্থ প্রবাহ সৃষ্টি হয় এসব অভিবাসীদের দ্বারা। সেজন্য উল্লেখিত সাতটিসহ অন্যান্য মুসলিম দেশসমূহে যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশের বিষয়ে নিষেধাজ্ঞার কারণে বিশ্বের সংশ্লিষ্ট দেশসমূহে হাজার হাজার অভিবাসীর যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশ আটকে যায়। এতে কার্যত যুক্তরাষ্ট্রসহ সংশ্লিষ্ট দেশগুলোর মধ্যে একটি অচলাবস্থার সৃষ্টি হতে দেখা যায়। সেজন্য বিষয়টি যুক্তরাষ্ট্রের ফেডারেল আদালত পর্যন্ত গড়ায়।

আদালত অভিবাসন বিষয়ে জারি করা ট্রাম্পের জনস্বার্থ বিরোধী নির্বাহী আদেশ স্থগিত করে দিলে ট্রাম্প এতে অসন্তুষ্টি প্রকাশ করেন এবং এর প্রতিক্রিয়া হিসেবে তিনি সেদেশের সর্বোচ্চ রাষ্ট্রীয় আইন কর্মকর্তা এটর্নি জেনারেলকে বরখাস্ত করেন। পরবর্তীতে আদালতের রায়ের বিরুদ্ধে ট্রাম্প প্রশাসন আপিল করেন। শেষ পর্যন্ত দীর্ঘ শুনানি শেষে ট্রাম্প প্রশাসনের আপিল আবেদন খারিজ করে দিয়ে আদেশ জারি করেন ফেডারেল আদালত। এতে ট্রাম্প সংক্ষুব্ধ হয়ে আদালতের সমালোচনায় আবারো মুখর হয়েছেন। তিনি আদালতের বিরুদ্ধে নিরপেক্ষতা হারানোর অভিযোগ তোলেন। সেইসাথে ট্রাম্প জেফ সেশনসকে নতুন এটর্নি জেনারেল হিসেবে নিয়োগ দিয়েছেন।

একদিকে শপথ গ্রহণের সাথে সাথে নিজের মেয়ের এক জামাইকে প্রেসিডেন্টের বৈদেশিক বিষয়ক উপদেষ্টা নিয়োগ দিয়ে স্বজনপ্রীতির দায়ে সমালোচিত হচ্ছেন, অপরদিকে মেয়ের পক্ষে সাফাই গেয়েও ব্যাপক তোপের মুখে পড়েছেন ট্রাম্প। এমনকি ট্রাম্পের অভিবাসন নীতির বিরোধীতার কারণে সুপ্রিমকোর্টে খোদ তারই মনোনীত এক বিচারক নিল গোরসাশ তার কড়া সমালোচনা করেছেন।

তবে আশার কথা এসব ইস্যুতে বাংলাদেশের জন্য তেমন কোন অসুবিধা এখনো হয়নি এবং ভবিষ্যতে হবে এমনটিও মনে হয় না। কারণ ট্রাম্প প্রকারান্তরে সম্প্রতি চীন, ভারত এবং রাশিয়ার সাথে কার্যত অতীতের সকল তিক্ততা ভুলে নতুন করে সম্পর্ক সৃষ্টির জন্য এগিয়ে চলেছেন। আর ভারত ও রাশিয়া বাংলাদেশের আদি ও অকৃত্রিম বন্ধু হিসেবে পরিচিত। অপরদিকে চীনও সম্প্রতি বাংলাদেশের সাথে তার সকল দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের ক্ষেত্রে উদারনৈতিক অবস্থান দেখাচ্ছে। কাজেই যুক্তরাষ্ট্রের বন্ধুরাই বাংলাদেশেরও বন্ধু। তাছাড়া দল হিসেবে রিপাবলিকানদের চেয়ে ডেমেক্রেট ভালো হলেও কথিত আছে, ডেমোক্রেট প্রশাসনের সাথে বাংলাদেশের কোন বিশেষ ব্যক্তির সম্পর্ককে পাশ কাটানোর অবকাশ পেয়েছে।

কিন্তু তারপরও কার্যক্রম দেখে এ পর্যায়ে এসে সবাইতো ট্র্রাম্প প্রশাসনের বিষয়ে সকল আশা ছেড়েই দিয়েছেন, তারউপর তিনি তার প্রেসিডেন্সির পুরো মেয়াদ শেষ করতে পারবেন কিনা এ বিষয়েও সন্দেহ প্রকাশ করে এখন কথা উঠছে বেশ জোড়েশোরেই। ডিভি ভিসা লটারি বন্ধ হয়ে গেলে বাংলাদেশের মতো অনেক দেশের অভিবাসীদের জন্যই খারাপ খবর বয়ে আনবে। তবে ফেডারেল আদালতের সর্বশেষ আপিলের রায়টিকে ভবিষ্যতে যদি ট্রাম্প প্রশাসন আর প্রভাবিত করতে না পারে, সেক্ষেত্রে ভবিষ্যতে মুসলিম দেশ হিসেবে বাংলাদেশের ভয় ও আতঙ্কের কোন কারণ থাকবে না।

সেক্ষেত্রে যুক্তরাষ্ট্রের অভ্যন্তরীণ পরিবেশও ভালো থাকবে। অভিবাসন ইস্যুতে ট্রাম্প প্রশাসনের নির্বাহী বিভাগের সাথে বিচার বিভাগের যে বিশ্বাস-অভিশ্বাস ও ভুল বোঝাবুঝির সৃষ্টি হয়েছে তাতে ট্রাম্প সিঃসন্দেহে টালমাটচাল। যতই সময় যেতে থাকবে এসব বিষয় আরো জটিল আকার ধারণ করলে তাতে ট্রাম্পের ভবিষ্যৎ খুব ভালো নয়। সেইসাথে বিশ্ব পরিস্থিতিও সমস্যাযুক্ত হতে পারে। যা কখনই কাম্য হতে পারে না।

লেখক: ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রার, জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়
[email protected] 

বহুমাত্রিক.কম

Walton Refrigerator Freezer
Walton Refrigerator Freezer