ঢাকা : গবেষণা ও প্রবন্ধসাহিত্যে বিশেষ অবদান রাখার জন্য ‘অনন্যা সাহিত্য পুরস্কার-১৪২৩’ পেলেন বিশিষ্ট গবেষক ও প্রাবন্ধিক অধ্যাপক বেগম আকতার কামাল।
শনিবার বিকেল ৪টায় জাতীয় জাদুঘরের কবি সুফিয়া কামাল মিলনায়তনে আনুষ্ঠানিকভাবে এই পুরস্কার দেওয়া হয়। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন ইমেরিটাস অধ্যাপক সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী।
বিশেষ অতিথি ছিলেন কবি আসাদ চৌধুরী ও কথাসাহিত্যিক সেলিনা হোসেন। সভাপতিত্ব করেন অনন্যা সম্পাদক তাসমিমা হোসেন। শুরুতে কবিতা আবৃত্তি করেন আবৃত্তিশিল্পী শামীমা চৌধুরী।
পুরস্কৃত লেখককে উত্তরীয় পরিয়ে দেন কথাসাহিত্যিক সেলিনা হোসেন। সনদ তুলে দেন কবি আসাদ চৌধুরী। সম্মাননা ক্রেস্ট অর্পণ করেন প্রধান অতিথি ইমেরিটাস অধ্যাপক সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী এবং ৫০ হাজার টাকার চেক তুলে দেন অনন্যা সম্পাদক তাসমিমা হোসেন।
অধ্যাপক বেগম আকতার কামাল বাংলাদেশের প্রবন্ধসাহিত্য ও গবেষণায় উল্লেখযোগ্য একটি নাম। তাঁর সম্পর্কে কথাসাহিত্যিক সেলিনা হোসেন বলেন, বেগম আকতার কামালের কাজের গভীরতা অনেক। তিনি বাংলা সাহিত্যের ক্ল্যাসিক ঐতিহ্য নিয়ে গুরুত্বপূর্ণ সব কাজ করেছেন। ’৪৭ পরবর্তী বাংলা সাহিত্যের মূলধারার বৈশিষ্ট্য নিয়ে পুরস্কৃত এই গবেষক একটি বড় বই লিখবেন এখন এটাই আমাদের প্রত্যাশা।
কবিতা নিয়ে বাংলাদেশে প্রতিনিধিত্বশীল কাজ করেছেন বেগম আকতার কামাল। তাঁর কাজের মূল্যায়ণ করতে গিয়ে কবি আসাদ চৌধুরী বলেন, কবিতা নিয়ে বাংলাদেশে গুরুত্বপূর্ণ সব কাজ করে চলেছেন বেগম আকতার কামাল। কবিতার বিষয়ম প্রকরণ ও শৈলী নিয়ে তিনি যে কাজ করেছেন তার জন্যে এ স্বীকৃতি তাঁর একান্ত কাম্য। যোগ্য লেখক হিসেবেই তিনি আজ সম্মানিত হলেন।
প্রধান অতিথি প্রাবন্ধিক অধ্যাপক সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী বলেন, প্রযুক্তির বিকাশের কারণে সাহিত্য আক্রান্ত হয়। তা সত্ত্বেও সাহিত্যের মূল্য কখনো কমবে না। পুরস্কৃত লেখক সম্পর্কে তিনি বলেন, বেগম আকতার কামালের গবেষণা-অধ্যায়ন আমাদের সমৃদ্ধ করে। বিষয় উপস্থাপনার রীতি তাঁর নিজস্ব।
নিজের অনুভূতি ব্যক্ত করতে গিয়ে পুরস্কারজয়ী লেখক অধ্যাপক বেগম আকতার কামাল বলেন, এই প্রথম কোনো নারী পরিচালিত কোনো প্রতিষ্ঠান আমাকে পুরস্কৃত করলো। এটা অন্যরকম ভালোলাগার মতো বিষয়। আমি নিশ্চয় অনুপ্রাণিত এবং সম্মানিত।
অনুষ্ঠানের সভাপতি তাঁর সমাপনী বক্তব্যে বলেন, বেগম আকতার কামালের মতো আন্তর্জাতিক মানের অনেক সৃজনশীল ও মননশীল লেখক আমাদের আছে। এখন প্রয়োজন সম্মিলিত উদ্যোগে তাঁদের লেখা ইংরেজিতে অনুবাদের মাধ্যমে বিশ্বসাহিত্যে বাংলা সাহিত্যের একটা স্থান তৈরি করে নেওয়া। বাংলা সাহিত্যের আন্তর্জাতিকমূল্য তৈরি করার সময় এসেছে।
তিনি আরো বলেন, অনন্যা দেশীয় প্রেক্ষাপটে সৃজনশীল ও মননশীল নারী লেখকদের অনুপ্রাণিত করতে কাজ করে যাচ্ছে। এটা একটা চলমান প্রক্রিয়া, আপনারা সঙ্গে থাকলে আমাদের যাত্রা আরো অনেকদূর অগ্রসর হবে।
বেগম আকতার কামাল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের অধ্যাপক। বর্তমানে বিভাগীয় প্রধান ও কলা অনুষদের ডিন। জন্ম চট্টগ্রাম শহরে। বেগম আকতার কামাল ১৯৯২ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগ থেকে ‘বিষ্ণু দে-র কবিমানস ও কাব্য’ শীর্ষক গবেষণার জন্য পিএইচডি ডিগ্রি অর্জন করেন। তাঁর প্রকাশিত গ্রন্থসমূহ হচ্ছে: বিষ্ণু দে-র কাব্য : পুরাণ প্রসঙ্গ, মাহমুদা খাতুন সিদ্দিকা (জীবন ও সাহিত্যকৃতির মূল্যায়ন), বিষ্ণু দে-র কবিস্বভাব ও কাব্যরূপ, আধুনিক বাংলা কবিতা ও মিথ, বিশ্বযুদ্ধ জীবন ও কথাশিল্প,; কবিতার নান্দনিকতা : প্রাচীন ও মধ্যযুগ, কবির উপন্যাস ইত্যাদি।
উল্লেখ্য, বাংলা ১৪০১ সন (১৯৯৩ সাল) থেকে অনন্যা সাহিত্য পুরস্কার প্রবর্তন করা হয়েছে। প্রতিবছর একজন নারী-সাহিত্যিককে সাহিত্যে বিশেষ অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ এ পুরস্কার প্রদান করা হয়। এ-পর্যন্ত যাঁরা এই পুরস্কার পেয়েছেন: সেলিনা হোসেন, রিজিয়া রহমান, ড. নীলিমা ইব্রাহিম, দিলারা হাশেম, রাবেয়া খাতুন, ড. সন্জীদা খাতুন, শহিদ জননী জাহানারা ইমাম (মরণোত্তর), নূরজাহান বেগম, রাজিয়া খান, রুবী রহমান, পূরবী বসু, আনোয়ারা সৈয়দ হক, মকবুলা মনজুর, ঝর্ণাদাশ পুরকায়স্থ, সালেহা চৌধুরী, নূরজাহান বোস, মালেকা বেগম, কাজী রোজী, ড. নিয়াজ জামান, জাহানারা নওশিন এবং সোনিয়া নিশাত আমিন।