Bahumatrik | বহুমাত্রিক

সরকার নিবন্ধিত বিশেষায়িত অনলাইন গণমাধ্যম

বৈশাখ ৫ ১৪৩১, শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪

অধ্যক্ষের দুর্নীতিতে ডুবছে আরআইএম ডিগ্রী কলেজ

ইউসুফ দেওয়ান রাজু, সিরাজগঞ্জ প্রতিনিধি

প্রকাশিত: ১২:০৩, ১৬ জুন ২০১৬

আপডেট: ০০:০০, ৩১ ডিসেম্বর ১৯৯৯

প্রিন্ট:

অধ্যক্ষের দুর্নীতিতে ডুবছে আরআইএম ডিগ্রী কলেজ

সিরাজগঞ্জ: অধ্যক্ষের অনিয়ম, দুর্নীতি আর লুটপাটের কারণে ডুবতে বসেছে কাজীপুর উপজেলার আরআইএম ডিগ্রী কলেজ।

জাল সার্টিফিকেটে কর্মচারী নিয়োগ, সার্টিফিকেটের সাথে জন্ম সনদের অমিল, কলেজ ক্যাম্পাসে কোচিং বাণিজ্য, শিক্ষক নিয়োগে মেধা তালিকায় প্রথম হওয়ার পরও টাকার বিনিময়ে দ্বিতীয় স্থান অধিকারীকে নিয়োগ দান, শিক্ষক নিয়োগে কলেজ উন্নয়নের জন্য ডোনেশনের নামে লাখ লাখ টাকা আত্মসাতসহ বহুবিধ অভিযোগ উঠেছে বর্তমান অধ্যক্ষ আব্দুল মান্নান তালুকদারের বিরুদ্ধে।

অভিযোগ থেকে জানা যায়, বর্তমান কলেজে কর্মরত সহকারী গ্রন্থগারিক মোছা: শিউলি খাতুন লাইব্রেরি সাইন্স ডিপ্লোমা কোর্সের না হয়েও টাকার বিনিময়ে বগুড়ার একটি বেসরকারী প্রতিষ্ঠান থেকে সার্টিফিকেট সংগ্রহ করে অধ্যক্ষের যোগসাজসে নিয়োগ লাভ করে। তার কাগজপত্র এমপিওভুক্তির জন্য মাউশিতে একাধিকবার প্রেরণ করা হলেও ভুয়া সার্টিফিকেটের জন্য এমপিওভুক্ত না করে ফেরত পাঠানো হয়েছে। এর পর সম্প্রতি মাউশিতে টাকার বিনিময়ে মোছা: শিউলি খাতুনের এমপিওভুক্তি করা হয়েছে।

অপরদিকে কলেজের অর্থনীতি বিভাগের প্রভাষক মো: শাহদত হোসেনের এসএসসিতে ২.২৫ এবং এইচ এসসিতে ২.২০ জিপিএ প্রাপ্ত, যা তৃতীয় বিভাগের সমতুল্য। শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের স্মারক নংশিম/শাঃ১১/৫-১ (অংশ)/৫৮২ তারিখের জুন ২০০৯ নিয়োগ বিধি মোতাবেক কলেজ শিক্ষক নিয়োগের ক্ষেত্রে একাধিক তৃতীয় বিভাগ গ্রহণযোগ্য নয় বলে উল্লেখ রয়েছে। অথচ অধ্যক্ষ বড় অংকের টাকার বিনিময়ে নিয়োগ বোর্ডকে প্রভাবিত করে শাহদাত হোসেনের এমপিওভুক্তির জন্য তার কাগজপত্র বারবার পরিবর্তন করে মাউশিতে প্রেরণ করে আসছেন।

এদিকে কলেজের বাংলা বিভাগের সহকারী অধ্যাপক মোঃ আমিনুল ইসলাম চাকরীতে যোগদানের ক্ষেত্রে তারিখ পরিবর্তন করে অনিয়মের নতুন রেকর্ড সৃষ্টি করেছেন। তার নিয়োগপত্র অনুযায়ী তিনি ১৯৮১ সালের ১৭ ডিসেম্বর তারিখে যোগদান করেছেন। কিন্তু আমিনুল ইসলামের মাষ্টার্স পাসের সার্টিফিকেট অনুযায়ী তার পাশের তারিখ ১৯৮২ সালের ২১ মার্চ।

মাষ্টার্স পাস করার আগেই অর্থাৎ সার্টিফিকেট প্রাপ্তির পূর্বেই তিনি চাকরিতে যোগদান করে এমপিওভুক্ত হয়ে বিধি বর্হিভূতভাবে সরকারি অর্থ ও কলেজ অভ্যন্তরীন উৎস থেকে টাকা গ্রহণ করেছেন।

অধ্যক্ষের একনায়কতন্ত্র ও নিয়ম বর্হিভূতভাবে গত ১০ বছর যাবত কলেজের আয় ব্যয়ের হিসাব সঠিকভাবে দাখিল করেননি। অধ্যক্ষ আব্দুল মান্নান তালুকদার প্রভাব খাটিয়ে কলেজটিকে নিজের ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানে পরিণত করেছেন। গত ৭ বছরে কর্মচারী, প্রভাষকসহ উপাধ্যক্ষ নিয়োগে প্রায় ৭০ লাখ টাকার নিয়োগ বাণিজ্য করেছেন। কলেজ উন্নয়নের জন্য ডোনেশনের নামে অর্থ নেয়া হলেও ওইসব অর্থ কলেজ ফান্ডে জমা হয়নি। এ কারণে কলেজে কোন উন্নয়ন হয়নি।

জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় ও সরকারি বিধি মোতাবেক কলেজ পরিচালনা পর্ষদে ২জন পুরুষ শিক্ষক প্রতিনিধি ও ১জন মহিলা শিক্ষক প্রতিনিধি থাকার সুস্পষ্ট বিধান থাকলে কলেজ পরিচালনা পর্ষদে কোন মহিলা শিক্ষক প্রতিনিধি না রেখে তার পছন্দের ৩ জন পুরুষ শিক্ষক নিয়ে কমিটি গঠন করে কলেজ পরিচালনা করে আসছেন দীর্ঘদিন হলো।

প্রায় অর্ধশত বছরের প্রাচীন এই কলেজটিতে অধ্যক্ষের অনিয়ম, দুর্নীতি, স্বৈরাচারী ও একনায়কতন্ত্রের কারণে কলেজের শিক্ষক, কর্মচারী, অভিভাবক ও স্থানীয় এলাকাবাসীর মধ্যে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে। এব্যাপারে স্থানীয় এলাকাবাসীর পক্ষ থেকে জেলা প্রশাসক, দুর্নীতি দমন কমিমন ও শিক্ষা মন্ত্রনণালয় বরাবর অভিযোগ দায়ের করা হয়েছে। এসকল বিষয়ে এর আগে অধ্যক্ষ আব্দুল মান্নান তালুকদারের নামে আদালতে মামলা দায়ের করা হয়েছিলো।

অনিয়ম ও দুর্নীতির বিষয়ে কলেজ অধ্যক্ষ আব্দুল মান্নান তালুকদার সাংবাদিকদের সাথে কোন কথা বলবেন না বলে তিনি জানিয়েছেন।

 

বহুমাত্রিক.কম

Walton Refrigerator Freezer
Walton Refrigerator Freezer