ছবি: বহুমাত্রিক.কম
কুষ্টিয়া : যে বয়সে শিশু শিপনের (১০) হেসে খেলে স্কুলে যাওয়ার কথা-ঠিক সেই বয়সে অসুস্থ দাদীর ওষুধ কেনা ছোট-বড় দুই বোনের মুখে খাবার তুলে দেবার জন্য সে তার বাবার রেখে যাওয়া বাদামের ডালা (ঝুড়ি) নিয়ে রোজ সকালে বেরিয়ে পড়ে রোজগারে।
ডালাটি গলার সাথে ঝুলিয়ে স্কুল, কলেজ, বাজার, খেলার মাঠ সহ যদুবয়রা ও বিভিন্ন এলাকার এক প্রান্ত হতে অপর প্রান্ত পর্যন্ত বাদাম বিক্রি করে বেড়ায় শিপন। অভাব অনটনের সংসারের দায় মাথায় নিয়ে জীবন সংগ্রামে নামে শিশু শিপন।
দাদির ওষুধ কেনা ছাড়াও ছোট-বড় দুই বোনের ভারও তার ওপর। এমন দায়িত্বে জড়িয়ে শিশু শিপন নিজের পড়াশোনার কথা ভাবতেই ভুলে গেছে।
শিপন বলে, এখন আমি বাধ্য হয়েই লেখাপড়ার চিন্তা বাদ দিয়ে বাপের (বাবা) রেখে যাওয়া এই পেশায় নামছি। স্কুল যদি যায় তাহলে আমার সংসার চালাবে কে ? প্রতিদিন বাদাম বিক্রি করে যা আয় হয় তা দিয়ে সংসার চালায়।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, কুমারখালী উপজেলার যদুবয়রা ইউনিয়নে যদুবয়রা গ্রামের হতদরিদ্র মৃত আরিফ (৩০)’র ছেলে এই শিপন। বাবা গত রমজান মাসে আকষ্মিকভাবে মারা গেলে আরও নিঃস্ব হয়ে যায় পরিবারটি।
সংসারে আর তেমন কেউ না থাকলে বাবার বাদাম বিক্রির কাজটি করতে শুরু করেন শিপন। বৃষ্টি বা অন্য কোন প্রাকৃতিক দূর্যোগ হলে অধিকাংশ দিনে তাদের না খেয়ে দিন অতিবাহিত হয়।
জানা যায়, তার ২ বছর বয়সের সময় মা তাদের ভাই-বোনদের রেখে পাশের গ্রামের অন্য একটি ছেলের সাথে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হয়। এক পর্যায়ে সে রাগে ক্ষোভে বলে আমার মাও মারা গেছে।
এমন এক হৃদয়বিদারক শিশুর কাহিনী তুলে ধরে বিষয়টি কুষ্টিয়ার জেলা প্রশাসক মোঃ জহির রায়হানকে ফেসবুক পেজে অনুরোধ জানিয়ে পোষ্ট করেন মাহামুদ হাসান নামের এক যুবক।
বিষয়টি জানতে পেরে কুমরাখালী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে বিষয়টি দেখতে বলেন। এবং তাকে ডেকে পাঠান জেলা প্রশাসক।
রোববার কুষ্টিয়ার চজলা প্রশাসক মো. জহির রায়হান তাঁর কার্যালয়ে শিশু শিপণকে আর্থিক সহায়তা প্রদান করেন এবং সেই সাথে শিশুটিকে তার ভাই-বোনসহ সরকারি শিশু পরিবার (বালক), সরকারি শিশু পরিবার (বালিকা) এবং শেখ রাসেল শিশু পুনর্বাসন কেন্দ্রে পুনর্বাসিত করেন।
এসময় অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক, শিক্ষা ও আই,সি,টি) মোঃ মুজিব-উল-ফেরদৌস, কুমারখালী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সাহেলা আক্তার, জেলা সমাজসেবা অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক, রোখসানা পারভীন, শেখ রাসেল শিশু পুনর্বাসন কেন্দ্রের উপ-পরিচালক কামাল উপস্থিত ছিলেন।
এদিকে ফেসবুকের মাধ্যমে শিশু শিপনকে পুনর্বাসন করতে পারায় জেলা প্রশাসনকে অভিনন্দন জানিয়েছেন মাহমুদ হাসান। তিনি বলেন, হয়তোবা শিশুটিকে নিয়ে জেলা প্রশাসককে অনুরোধ না করলে এটি সম্ভব হতো না।
শিশুটির জন্য ফেসবুকে তুলে ধরার ফলে তার পরিবারের পাশে যেভাবে জেলা প্রশাসক এগিয়ে এসেছে আমি তাতে অভিভুত।
জেলা প্রশাসক মো.জহির রায়হান বলেন, সমাজে এমনো অনেক নানান অসঙ্গতি থেকে থাকে। তাদের পাশে শুধু জেলা প্রশাসন নয় বিত্তবানদের এগিয়ে আসতে হবে।
বহুমাত্রিক.কম