Bahumatrik | বহুমাত্রিক

সরকার নিবন্ধিত বিশেষায়িত অনলাইন গণমাধ্যম

বৈশাখ ১১ ১৪৩১, বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪

অতিবৃষ্টিতে উপকূলীয় বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধ ঝুকিতে

শেখ হেদায়েতুল্লাহ, নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশিত: ২২:৩৪, ২৪ জুলাই ২০১৭

আপডেট: ০০:০০, ৩১ ডিসেম্বর ১৯৯৯

প্রিন্ট:

অতিবৃষ্টিতে উপকূলীয় বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধ ঝুকিতে

খুলনা : শ্রাবণের বৃষ্টি দুর্যোগে রূপ নিয়েছে। গত চারদিনের বৃষ্টিতে খুলনার প্রত্যন্ত অঞ্চলের বিভিন্ন গ্রামে সৃষ্টি হয়েছে জলাবদ্ধতা। অতিবৃষ্টি, দমকা বাতাস ও নদীর জোয়ারে পানির অস্বাভাবিক উচ্চতায় প্রবাহিত হওয়ায় উপক’লীয় বন্যা নিয়ন্ত্রণ বেড়ি বাঁধ হুমকির মুখে পড়েছে।

জেলার প্রায় ২০০ কিলোমিটার বেড়িবাঁধ জরাজীর্ণ অবস্থায় রয়েছে। যে কোন মুহুর্তে ভেঙ্গে গিয়ে জোয়ারের নোনা পানিতে বির্স্তীর্ণ জনপদ প্লাবিত হতে পারে। পানি উন্নয়ন বোর্ড কর্তপক্ষ বলছে, বেড়িবাঁধের বাইরে পানি আটকে রেখে ও বেড়ি বাঁধের তলদেশ ছিদ্র করে পাইপ বসিযে বিলে নোনা পানি প্রবেশ করিয়ে চিংড়ি চাষ করায় বেড়িবাঁধের মাটি নরম থাকায় বাঁধ বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।

জানা যায়, গত চারদিন পূর্বে শুরু হয় শ্রাবনের মুষলধারে বৃষ্টি। বৃষ্টিতে খুলনা মহানগরীর গুরুত্বপূর্ন সড়ক হয়ে পড়ে জলমগ্ন। তাছাড়া খুলনার নিন্মাঞ্চল জলাবদ্ধতার শিকার হয়েছে। শহরের পাশ দিয়ে বয়ে চলা রুপসা ও ভৈরব নদে জোয়ারের পানি স্বাভাবিকের চেয়ে কযেকফুট উঁচু দিয়ে জোয়ারের পানি প্রবাহিত হচ্ছে। নগরীর ড্রেন, নর্দমা সময় মত পরিস্কার না করায় ময়লা আর্বজনায় আটকে যাওয়ায় দ্রুত বৃষ্টির পানি নিষ্কাশন হতে পারছে না। এছাড়া শহরের বাইরে উপজেলাগুলোর বিলে, জনবসসিতে বৃষ্টির পানি আটকে আছে। বিভিন্ন বিলে জলাবদ্ধতার কারণে আমন বীজতলা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।

জনপদ রক্ষায় উপকূলীয় নদ-নদীতে পানি উন্নয়ন বোর্ডের বেড়িবাঁধগুলো অতিবৃষ্টির কারণে ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে পড়েছে। কয়রা উপজেলার দশালিয়া, উত্তর বেদকাশি, কাঠকাটা, ৬ নম্বর কয়রা, গোলবুনিয়া, হরিহরপুর, মাটিয়াভাঙ্গা, কয়রাসদরসহ প্রায় ২০টি স্থানের বেড়িবাঁধ মারাত্মক ঝুকিপূর্ণ হয়ে পড়েছে। দাকোপ উপজেলার গাইনবাড়িয়া, ঝালবুনিয়া, জালিয়াখালী, চালনা, কামারখোলাসহ বিভিন্ন স্থানে বেড়িবাঁধ ঝুকি পূর্ণ হয়ে পড়েছে। ডুমুরিযার চাঁদগড়, জালিয়াখালী। বটিয়াঘাটার বারোআড়িয়ায় বাঁধের অবস্থা সবচেযে বেশি খারাপ। যে কোন সময় ওই সকল স্থান ভেঙ্গে জনপদ প্লাবিত হতে পারে।

পানি উন্নয়ন বোর্ড কয়রা জোনের সাব- ডিভিশনাল ইঞ্জিনিয়ার (এসডিই) ফারুক আহমেদ বলেন, পানি উন্নয়ন বোর্ডের বেড়িবাঁধগুলো প্রায় ৫০ বছর আগে তৈরী করা। তখন যে নিয়মে বেড়ি বাধ দেয়া হয় সেই অবস্থা এখন আর নেই। বেড়ি বাঁধের বাইরে পানি আটকে রেখে চিংড়ি চাষ করা হচ্ছে। পানি আটকে রাখার কারণে মাটির বাঁধ নরম হয়ে থাকে। সামান্য বৃষ্টি, নদীর ¯্রােত তখন বাঁধ সামাল দিতে পারে না। পানির চাপ বেশি হলেই সেটি ভেঙ্গে যায়।

পানি উন্নয়ন বোর্ড খুলনা-২ এর সাব- ডিভিশনাল ইঞ্জিনিয়ার (এসডিই) পিযুষ কান্তি কুন্ডু বলেন, বর্তমানে আমাবষ্যা গোন চলছে। এ সময়ে নদীর পানি স্বাভাবিকের চেয়ে ৪/৫ ফুট উচ্চতায় জোয়ারের পানি প্রবাহিত হয়। এ কারণে বেড়িবাঁেধ জোয়ারের পানির চাপ বাড়ে এতে বাঁধ ক্ষতিগ্রস্ত হয়। তিনি বলেন, এই জোনে ৫১০ কিলোমিটার বেড়িবাঁধ রয়েছে। যার মধ্যে প্রায় ১০০ কিরোমিটার বাঁধ নানা কারণে ক্ষতিগ্রস্ত। ২০ কিলোমিটার বাঁধ অধিক ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে পড়েছে। তবে বাঁধ মেরামতের ও রক্ষার জন্য পানি উন্নয়ন বোর্ড সব সময় সতর্ক অবস্থায় রয়েছে।

পানি উন্নয়ন বোর্ডের খুলনা-১ ডিভিশনাল ইঞ্জিনিয়ার (এসডিই) পলাশ কুমার ব্যানার্জী বলেন, এ জোনে মোট বেড়ি বাঁধ রয়েছে ৫৫৩ কিলোমিটার। এর মধ্যে ঝুকিপূর্ণ ২০ কিলোমিটার। ডুমুরিয়ার জেলেখালী ও চাঁদগড়ের ৩৬৫ মিটার এলাকা অধিক ঝুকিপূর্ণ অবস্থায় রয়েছে। এছাড়া বটিয়াঘাটার বারোআড়িয়া এলাকায় ২৫ মিটার এলাকার অবস্থাও খুবই ঝুকিপূর্ণ। তিনি বলেন, বেড়িবাঁধগুলোর তলদেশ ছিদ্র করে চিংড়ি চাষীরা পাইপ বসিয়ে ঘেরে নোনা পানি প্রবেশ করায় এ কারণে বাঁধগুলো বেশি খারাপ হয়ে পড়ে। তাদের বিরুদ্ধে মামলা করলেও তারা প্রভাবশালী হওয়ায় কিছুই হয় না।

খুলনা আবহাওয়া অধিদপ্তরের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আবহাওয়াবিদ আমিরুল আযাদ বলেন মৌসুমী বায়ূ সক্রিয় থাকায় বৃষ্টিপাত হচ্ছে। মঙ্গলবার থেকে বৃষ্টির তীব্রতা কমতে পারে। তিনি বলেন, খুলনায় গত চারদিনে মোট বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয় ৩০৩ মিলিমিটার, এর মধ্যে ২১ জুলাই ১৩০ মিলিমিটার, ২২ জুলাই ৬৬ মিলিমিটার, ২৩ তারিখে ১৯ মিলিমিটার ২৪ তারিখ দুপুর তিনটা পর্যন্ত ৮৪ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়।

বহুমাত্রিক.কম

Walton Refrigerator Freezer
Walton Refrigerator Freezer