Bahumatrik | বহুমাত্রিক

সরকার নিবন্ধিত বিশেষায়িত অনলাইন গণমাধ্যম

বৈশাখ ৫ ১৪৩১, শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪

অগ্রজের আশীর্বাদ ও আমাদের সাংবাদিকতা

আশরাফুল ইসলাম

প্রকাশিত: ২২:১৮, ১৪ নভেম্বর ২০১৭

আপডেট: ২৩:৩৭, ১৮ নভেম্বর ২০১৭

প্রিন্ট:

অগ্রজের আশীর্বাদ ও আমাদের সাংবাদিকতা

ছবি : বহুমাত্রিক.কম

ঢাকা : সঙ্গীতচর্চা নিঃসন্দেহে গুরুমূখি বিদ্যা। তবে আমার কাছে সাংবাদিকতাও তাই। শাস্ত্রীয় সঙ্গীতের তীর্থভূমি এই বাংলাদেশের মাটিতে জন্ম নেওয়া ওস্তাদ আলাউদ্দিন খাঁ পরম্পরার শিল্পীরাই বিশ্বজুড়ে শাস্ত্রীয় সঙ্গীতকে সমাদৃত করেছে-নিয়ে গেছেন উচ্চাসনে।সঙ্গীত সমঝদারদের কাছে তাদের যে হিমালয়সম মর্যাদার আসন সেটি একদিনে তৈরি হয়নি। তাদের নিরন্তর সাধনা, গুরুর প্রতি অগাধ ভক্তি সেই মর্যাদা এনে দিয়েছে। 

সঙ্গীতচর্চার গুরুমূখি এই পরম্পরার সঙ্গে সাংবাদিকতার যে সাযুজ্য, সমকালীন প্রেক্ষাপটে তা আরও প্রাসঙ্গিক হয়ে উঠেছে। শিল্প-সাহিত্য, সাংবাদিকতা কিংবা সৃজনশীলকর্মে এখন দ্রুত জনপ্রিয়তা পাওয়ার যে আত্মঘাতী প্রবণতা বাড়ছে, সেখানে আমাদের ঐতিহ্যিক পরম্পরার গুরুত্ব প্রকট হয়ে ধরা দিয়েছে।

অগ্রজ সাংবাদিক অনলাইন নিউজপোর্টাল পূর্বপশ্চিমবিডি নিউজের প্রধান সম্পাদক পীর হাবিবুর রহমানের সঙ্গে আজ কিছু সময় একান্ত আলাপচারিতায় ঘুরেফিরে এই প্রসঙ্গটিই সামনে আসছিল। অন্ধরের সেই আলাপচারিতার নির্যাস প্রকাশ্যে আনার প্রয়োজন বোধ করেছি এজন্য যে-সমকালীন সাংবাদিকতার চর্চায় যে অপচর্চা কিংবা অপরিণত চর্চা বিদ্যমান তার অবসান জরুরি। 

বিপুল শ্রমবাজার, তৈরি পোশাক খাত, চিংড়ি, রূপালি ইলিশ, সোনালি আঁশ পাট, রেশম, ওষুধ, চামড়া, সাম্প্রতিককালের সফটওয়্যার তৈরিসহ সম্ভাবনার নতুন দিগন্তে যেমন বাংলাদেশের অবস্থান বিশ্বে উজ্জ্বলতর হচ্ছে, ঠিক তেমনি ভূ-রাজনৈতিক কারণেও আমরা ততোধিক গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছি।এমন সময়ে দাঁড়িয়ে আমাদের সাংবাদিকতা যতটা ওয়াকেবহাল হয়ে উঠা দরকার ঠিক ততোটা কী হচ্ছে? তিন দশকেরও বেশি সময় ধরে দাপুটে রাজনৈতিক রিপোর্টার ও সময়ের প্রভাবশালী রাজনৈতিক বিশ্লেষক পীর হাবিব ভাইয়ের কণ্ঠে সেই প্রশ্নই উচ্চারিত হচ্ছিল। 

তিনি বলছিলেন, ‘সাংবাদিকতায় প্রচুর পড়াশোনার যে অপরিহার্যতা তা এখন নতুনদের মাঝে হতাশাজনকভাবেই কম। এখানে সহজে খ্যাতির চূড়ায় উঠার অসুস্থ প্রবণতা। একজন সংবাদকর্মীর ভাষা জ্ঞান, লিপিকুশলতা, ব্যক্তিত্ব, বিনয়, সর্বোপরি সততার প্রতি দৃঢ়চিত্ত মনোভাব খুবই জরুরি। সেপথে আমাদের ক্রমাবনতি হচ্ছে।’

আলাপচারিতা শেষে অনুজপ্রতিম সহকর্মীর হাতে নিজের লেখা দুটি বই আশীর্বাদ হিসাবে তুলে দেন পীর হাবিবুর রহমান। 

সুস্থ সাংবাদিকতার বিকাশে সমাজনেতা, বিশেষ করে রাজনীতিবিদদের যে ইতিবাচক ভূমিকা থাকার দরকার-বর্তমানে তার উল্টোটা হচ্ছে বলেই মনে করেন পীর হাবিব। সম্প্রতি এক অনুষ্ঠানে সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রী এবং আওয়ামীলীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের মফস্বল সাংবাদিকতার দৈন্যতা নিয়ে বিষোদগার করেন।

এবিষয়ে জ্যেষ্ঠ এই সাংবাদিক বলছিলেন, ‘এর পেছনে কারা দায়ী তা আগে ভেবে দেখতে হবে। মফস্বলে সাংবাদিকদের ব্যক্তি চরিত্র বিনষ্টে ভূমিকা এই রাজনীতিবিদরাই রাখছেন। তারাই আওয়ামীল-বিএনপি বা অন্য দলের সাংবাদিক হিসাবে শ্রেণিবিভাজন করছেন। সুস্থ সাংবাদিকতার বিকাশে তো দেশই লাভবান হয়, সমাজও এগিয়ে যায়-এটা তো তাদেরও এড্রেস করতে হবে।’

সমকালীন রাজনীতি-সাংবাদিকতায় বৈষয়িক স্বার্থ প্রকট হয়ে উঠেছে-আমার এমন মন্তব্যে একমত পীর হাবিব ভাইও। তিনি এবিষয়ে যোগ করেন, ‘এক সময় গ্রাম থেকে নেতা হয়ে উঠে আসতেন, তারা গণমানুষের অধিকার আদায়ে বছরের পর বছর সংগ্রাম করতেন, ত্যাগ স্বীকার করতেন। জ্যেষ্ঠ নেতাদের কাছে রাজনীতি শিখতেন। নেতাকে কর্মীরা গুরুর মতোই ভক্তি করতেন, তার আদর্শ নিজের জীবনাচরণে প্রতিফলিত করতেন। এখন এসবের দরকার হয় না। বিত্ত-বৈভবের কাছে সব বিক্রি হয়।’

‘সাংবাদিকতায় অগ্রজের কাছে কিছু শেখার জন্য নতুনদের আগ্রহ ছিল। কারণ এটি একাডেমিক ছকে বাধা কোনো বিষয় শিখে তা প্রয়োগ করলেই সাংবাদিকতা হয় না। এটি নিরন্তর শিখে যাওয়ার বিষয়। একসময় বার্তাপ্রধানরা একেক জন জীবন্ত জ্ঞানকোষ ছিলেন, অগাধ পান্ডিত্য ছিল তাদের। তারা ইতিহাস, সংস্কৃতি, রাজনীতি-কুটনৈতিক গতিপ্রবাহ, সমকালীন বিশ্ব, সমাজ বিবর্তন নিয়ে তারা নবীনদের অকাতরে জ্ঞান-ধারণা বিলোতেন। যা বিবেচিত হতো আশীর্বাদ হিসাবে, এখন নবীনদের সেই আকাঙ্খা-শ্রদ্ধাবোধ নেই। আশীর্বাদ গ্রহণের অভিপ্রায়ও নেই’

তাঁর এই সত্য উচ্চারণের সঙ্গে সহমত জানিয়ে জোর দিয়ে এটি বলা যেতে পারে, প্রযুক্তি বিজ্ঞানের যত উন্নতিই হোক সাংবাদিকতার মত সৃজনশীল পেশাগুলোতে ক্রমাগত অধ্যয়নের বিকল্প হতে পারে না। তেমনি সঙ্গীতের মত এখানেও গুরুমুখি পরম্পরা এ পেশাকে বিকশিত করবে, তাতে সন্দেহ নেই।

লেখক : প্রধান সম্পাদক, বহুমাত্রিক.কম

[email protected]         

বহুমাত্রিক.কম

Walton Refrigerator Freezer
Walton Refrigerator Freezer