Bahumatrik | বহুমাত্রিক

সরকার নিবন্ধিত বিশেষায়িত অনলাইন গণমাধ্যম

বৈশাখ ৪ ১৪৩১, শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪

ব্লাস্ট নিয়ে সিমিট’র ভূমিকার সমালোচনায় কৃষিমন্ত্রী

বিশেষ প্রতিবেদক

প্রকাশিত: ০২:৩১, ১২ মে ২০১৭

আপডেট: ১১:০০, ১২ মে ২০১৭

প্রিন্ট:

ব্লাস্ট নিয়ে সিমিট’র ভূমিকার সমালোচনায় কৃষিমন্ত্রী

ছবি: সংগৃহীত

ঢাকা : তিন দশকের বেশি সময় ধরে গম ফসলে ব্লাস্ট রোগ বিস্তার লাভ করলেও কার্যকর পদক্ষেপ না নেওয়ায় ইন্টারন্যাশনাল মেইজ এন্ড হুইট ইমপ্রুভমেন্ট সেন্টার (CIMMYT) এর কড়া সমলোচনা করেছেন কৃষিমন্ত্রী মতিয়া চৌধুরী। 

সাম্প্রতিক সময়ে দেশে ধান ও গমে ব্লাস্ট রোগের বিস্তারের প্রেক্ষিতে সংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞ এবং অংশীজনদের নিয়ে এক কর্মশালায় মেক্সিকো ভিত্তিক আন্তর্জাতিক এই প্রতিষ্ঠানের সমালোচনায় মুখর হন মন্ত্রী। 

বৃহস্পতিবার রাজধানীর ফার্মগেটে বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা কাউন্সিলের (বিএআরসি) সম্মেলন কক্ষে কৃষি মন্ত্রণালয় আয়োজিত এ কর্মশালায় মতিয়া চৌধুরী বলেন, ‘২০১৫-১৬-তে যখন গমে ব্লাস্ট দেখা দেয় তখন আমি মেক্সিকোতে গেলাম-সেখানে সিমিট এর হেডকোয়ার্টার। সেখানে বিভিন্ন সেশনে যখন ব্লাস্ট নিয়ে কথটা উঠলো তখন আমি বলেছি-৩১ বছর একটা রোগ অ্যাটাক করেছে আপনারা এখানে কিভাবে বসে আছেন?’

‘‘সারা পৃথিবীর সব বাঘা বাঘা বিজ্ঞানীরা আছেন এখানে-কেন আপনারা এটাকে ইগনোর করলেন? আমি এমনিতেই এখানে বলতে আসিনি-সিমিটকে এক লাখ ডলার চাঁদা দিয়ে কথা বলার অধিকার অর্জন করে এসেছি। এখানে ভিক্ষাও চাইতে আসিনি-মাগনাও আসিনি’’-ক্ষোভের সঙ্গে বলেন কৃষিমন্ত্রী।

দেশের বিজ্ঞানীদের গবেষণায় আশাবাদী মতিয়া চৌধুরী বলেন, ‘আমাদের বিজ্ঞানীবৃন্দ;তাদের অনেক সীমাবদ্ধতা আছে-কিছু গাফিলতিও আছে অস্বীকার করবো না-তারপরেও তারা যেটুকু কাজ করেন, তা যে ইন্টারন্যাশনাল অর্গানাইজেশন থেকে ...তারা যে আহমরি সিমিট দেখে অন্তত আমার তা মনে হয়নি। ৩১ বছর একটি ডিজিজকে তারা এড্রেস করলেন না!’

প্রতিবেশি দেশেও ব্লাস্ট রোগের প্রাদুর্ভাব থাকার কথা উল্লেখ করে মন্ত্রী বলেন, ‘প্রতিবেশি দেশেও এ ডিজিজ আছে। তারা স্বীকার করেন না। তাদের এনাফ ল্যান্ড-তারা হয়ত ওই এরিয়া বাদ দিয়ে অন্যখানে যান। তারা স্বীকার করেন না দুইটা কারণে-প্রথমত তাদের অনেক জায়গা আছে।দ্বিতীয়ত: তারা যেহেতু আন্তর্জাতিক বাজারে গমের বিক্রেতা, স্বীকার করলে বাজার পড়ে যেতে পারে। তাই তারা চেপে যান-কথা বলেন না।এটাই বাস্তবতা।’

ব্লাস্ট রোগের প্রাদুর্ভাব থেকে বেরুতে সাইডলাইনে চলে যাওয়া আউস ফসল চাষের গুরুত্বারোপ করে কৃষিমন্ত্রী বলেন, ‘এক সময় আউসের কম্পিটিটর ছিল পাট। এখন অনেক এলাকায় পানি স্বল্পতায় পাট চাষ কমছে-সেখানে আউসে যেতে পারি। আউসে এখন ভ্যারাইটাল ইমপ্রোভমেন্টের জন্য চেষ্টা করছি। সে ব্যাপারে আমরা সফল হতে পারবো।’

‘আমার গমও দরকার-ভুট্টাও দরকার-ধানও দরকার। ক্রপ রুটেশন নিয়ে ভাবতে হবে। একই জমিতে রাইস-রাইস-রাইসে থাকব না রাইস-মেইজ-হুইটে আসব-এক্সটেনশনে বা রিাসার্চার যারা আছেন তাদের এটি মাথায় নিয়ে কাজ করতে হবে’-যোগ করেন মন্ত্রী।

জলবায়ু পরিবর্তন নিয়ে ভুল ব্যাখ্যারও প্রবণতা রয়েছে উল্লেখ করে কৃষিমন্ত্রী বলেন, ‘বলা হচ্ছে কুয়াশার জন্য গমে ব্লাস্ট হচ্ছে। কিন্তু আমরা জানি দীর্ঘদিন থেকেই গমে কুয়াশা পড়লে দড়ি দিয়ে টেনে দেওয়া হত যাতে ময়েশ্চার রক্ষা হয়। এধরণের গবেষণার প্রবণতাও পরিহার করতে হবে।’

নিজেকে ‘প্রকৃতির তীক্ষ্ণ পর্যবেক্ষক’ দাবি করে মতিয়া চৌধুরী বলেন, ‘এইবার শিশির কম পড়েছে। মার্চে হঠাৎ দু’তিন দিন তাপমাত্রা বেশি ছিল। জলবায়ু পরিবর্তন সতত হচ্ছে। এই জলবায়ু পরিবর্তনের ওপর দিয়ে অনেক কিছুই চালিয়ে দিচ্ছি। কিন্তু জলবায়ু পরিবর্তন পৃথিবীতে কখনো হয় নাই-আমার তো মনে হয় না। সব সময়ই জলবায়ু পরিবর্তন হচ্ছে। তা না হলে এই ইভাল্যুয়েশনই বা কেমনে হলো?’

তিনি আরও বলেন, ‘সবচাইতে ভাল হত যদি আমরা যদি এমন ধানের জাত উদ্ভাবন করতে পারতাম-যা ডিসেম্বরে লাগাব-মার্চে উঠাবো। তাহলে কেবল হাওর এলাকা না কোস্টাল বেল্টেও করতে পারতাম।’ কৃষিমন্ত্রী গবেষকদের ভোক্তাদের কথা চিন্তা করে গবেষণা পরিচালনারও আহ্বান জানান।

 

বিএআরসি’র সিনিয়র ডকুমেন্টেশন অফিসার ড. সুস্মিতা দাসের সঞ্চালনায় কর্মশালায় স্বাগত বক্তব্য প্রদান করেন বিএআরসি’র পরিকল্পনা ও মূল্যায়ন বিভাগের সদস্য পরিচালক ড. পরেশ চন্দ্র গোলদার। 

এতে ধান ও গম ফসলে ব্লাস্ট রোগে মাঠপর্যায়ের ক্ষয়ক্ষতির চিত্র তুলে ধরেন কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের সরেজমিন উইংয়ের পরিচালক চৈতন্য কুমার দাস। বাংলাদেশে ব্লাস্ট মোকাবেলায় কর্মকৌশল নিয়ে পর্যবেক্ষণ তুলে ধরেন বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইনস্টিটিউটের প্লান্ট প্যাথলজি বিভাগের প্রধান ড. মো. আবদুল লতিফ। 

কর্মশালায় দেশে ব্লাষ্ট রোগের মোকাবেলায় গবেষণার কর্মকৌশল নিয়ে সুপারিশ তুলে ধরেন বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট(বারি)’র গম গবেষণা কেন্দ্র, দিনাজপুরের পরিচালক ড. নরেশচন্দ্র দেব বার্মা।  

কৃষি মন্ত্রণালয়ের সচিব মোহাম্মদ মইনউদ্দিন আবদুল্লাহ’র সভাপতিত্বে কর্মশালায় কৃষি গবেষণা ফাউন্ডেশনের (কেজিএফ) নির্বাহী পরিচালক ড. ওয়ায়েস কবীর, বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউটের মহাপরিচালক ড. আবুল কামাল আযাদ, বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইনস্টিটিউট(ব্রি)’র মহাপরিচালক ড. ভাগ্য রানী বণিক, বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্ল্যান্ট প্যাথলজি বিভাগের অধ্যাপক ড. মো. বাহাদুর মিয়া, শেরে বাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের জেনেটিক্স অ্যান্ড প্ল্যান্ট ব্রিডিং বিভাগের অধ্যাপক ড. শহীদূর রশীদ ভূঁইয়া, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের বায়োটেকনোলজি বিভাগের প্রধান অধ্যাপক ড. মো. তোফাজ্জল ইসলাম সহ সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানসমূহের প্রতিনিধিরা নির্ধারিত বিষয়ের ওপর তাদের মূল্যায়ন-পর্যবেক্ষণ তুলে ধরেন। 

বহুমাত্রিক.কম

Walton Refrigerator Freezer
Walton Refrigerator Freezer