Bahumatrik | বহুমাত্রিক

সরকার নিবন্ধিত বিশেষায়িত অনলাইন গণমাধ্যম

বৈশাখ ৫ ১৪৩১, শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪

হাওরে ধান কাটার শ্রমিক সংকট চরমে

জাহাঙ্গীর আলম ভুঁইয়া, সুনামগঞ্জ প্রতিনিধি

প্রকাশিত: ০০:৪২, ১১ এপ্রিল ২০১৮

আপডেট: ০০:০০, ৩১ ডিসেম্বর ১৯৯৯

প্রিন্ট:

হাওরে ধান কাটার শ্রমিক সংকট চরমে

ছবি : বহুমাত্রিক.কম

সুনামগঞ্জ : সুনামগঞ্জের হাওরাঞ্চলের গত কয়েক বছরে বোরো ধানের উপর দূর্যোগের সব শোক ভুলে নতুন আশায় এবারও হাওরে যত্ন করে বোরো ধান বুনেছেন কৃষকগন। এখন বিস্তীর্ণ হাওরাঞ্চলের যে দিকেই তাকানো যায় হাওর জুড়েই বোরো ধানে এখন সোনালী রং ধরেছে। ফলে অনেক স্থানে ধান কাটা বিক্ষিপ্ত ভাবে ধান কাটা শুরু করেছে কৃষকরা। হাওরে হাওরে বোরো ধানে সোনালী রং ধারণ করলেও সেই সাথে ধান কাটার শ্রমিক সংকটের আশঙ্কায় শঙ্কিত রয়েছে লাখো কৃষক।

জানা যায়, জেলার হাওরবেষ্টিত তাহিরপুর, জামালগঞ্জ, ধর্মপাশা, দিরাই, শাল্লা, বিশ্বম্ভরপুর, দক্ষিণ সুনামগঞ্জসহ ১১টি উপজেলার কৃষক পরিবারের প্রধান হাতিয়ার কৃষি কাজ (এক ফসলি বোরো ধান)। বছরের ৬মাস কৃষি কাজ আর বাকী ৬ মাস হাওরেই মাছ ধরা ও অন্যান্য কাজ করেই তাদের জীবন জীবিকা পরিচালনা করেছে বংশ পম্পরায় ৮০ ভাগ হাওর পাড়ের জনসাধারণ।

কৃষি কাজের মধ্যে তারা তাদের অতীত ঐতিহ্যের লালিত স্বপ্ন ধারাবাহিক ভাবে প্রকাশ করছে। প্রতি বছরেই এই সময়েই হাওরে একের পর এক সমস্যা লেগেই থাকে। গত বছরের সম্পূর্ণ বোরো ধান হারানোর পর পর নিষ্প্রাণ হাওরে পানি কমার সাথে সাথে বোরো ধান চাষাবাদ করতে না পারলেও একটু দেরীতে চাষাবাদ করারপরও এবার হাওরে জেগেছে প্রাণ। হাওরে মাঠে মাঠে এখন বোরো ধানে গোছা সোনালী রং ধারন করছে। ফলে জেগেছে কৃষকের বুকের ভিতরে সুখের প্রান। মলিন মুখে দেখা দিয়েছে আনন্দের হাসি। জেলার কিছু কিছু এলাকায় ধান পাকা শুরুও করায় কষ্টের ফলানো বোরো ধান কাটছে নিজে ও পরিবারের লোকজন নিয়ে।

কয়েক দিনের মধ্যেই জেলার বিশাল হাওর জুড়েই সোনালী রং ধারন করা বোরো ধান কাটার ধুম পড়ে যাবে। সেই ধান কাটার প্রস্তুতি নিচ্ছে হাজার হাজার কৃষক পরিবার। কিন্তু কৃষকগন তাদের কষ্টের ফলানো সোনালী ধান কাটার জন্য পূর্বের দিন গুলোর মত শ্রমিকের খোঁজ পাচ্ছে না। ফলে হাওরে হাওরে ধান কাটার শ্রমিকের সংকট থাকার কৃষকরা রয়েছে উৎকণ্ঠার মধ্যে।

সুনামগঞ্জ কৃষি সম্প্রসারন কার্য্যালয় সূত্রে জানা যায়, জেলার আবাদ জমির পরিমান ২লাখ ৭৬হাজার ৪শ’ ৪৭ হেক্টর। এবার ২লাখ, ২১ হাজার ৭৫০ হেক্টর জমিতে চাষাবাদ হয়েছে। আর বোরো ধানের লক্ষ্যমাত্রা ১২ লাখ ১৯ হাজার ৪১৪ মেট্রিক টন ধান। যার মূল্য ২ হাজার ৯২৪ কোটি ৬৭ লাখ ৩৬ হাজার টাকা।

বিভিন্ন হাওরের ধান কাটার শ্রমিক গন জানান,আমরা খুব ব্যস্থ সময় পার করছি কম শ্রমিক থাকায়। পুরো ধমে ধান কাটা শুরু হয়ের আমাদের রোজ বেশী পড়ব। কারন হিসাবে তারা বলেন,এবার হাওরে শ্রমিক কম।

খেলু মিয়া, সংকর, বিপুল, বোরহান, সাদেক আলীসহ জেলার বিভিন্ন হাওর পাড়ের কৃষকরা জানান, এবছর ধানের ফলন বেশী হলেও কিভাবে ঘরে ধান তুলবেন সে ধান। ধান কাটার শ্রমিক সংকট এখনেই দেখা দিয়েছে। পূর্বে দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে দল বেধেঁ চলে আসত ধান কাটার ব্যাপারীরা তাদের লোকজন নিয়ে। গত কয়েক বছর ধরেই অকাল বন্যায় বোরো ধান সম্পূর্ন পানিতে ডুবে যাওয়ায় ঐসব ঐলাকার ধান কাটার শ্রমিকগন আসতে চাচ্ছে না। বেশী টাকা দিলেও রাজি হচ্ছে না। কারন গত কয়েকবারের অকাল বন্যায় ফসল হারানো কথা স্মরন করে। এসে ধান কাটতে না পারলে তারা কি ভাবে চলবে। আর জমির মালিকগনেই বা কি ভাবে বাচঁবে আর তাদের দিবে। জেলার হাওরাঞ্চলে এবার ধান কাটার শ্রমিক না পাওয়া গেলে জমিতেই পাকা ধান থেকে যাবে এ আশঙ্কা করছে কৃষকগন।

তাহিরপুর উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান কামরুজ্জামান কামরুল বলেন,উপজেলার হাওরে ধান পাকা কাটা শুরু করেছে বিক্ষিপ্ত ভাবে। কয়েক দিনের মধ্যে সম্পূর্ন হাওরের ধান পেকে যাবে। হাওরে এবার শ্রমিক সংকট রয়েছে। শ্রমিক সংকট নিরসনের জন্য আমরা যাদুকাটা নদী, ফাজিলপুর, ট্যাকেরঘাট কয়লা, চুনাপাথর প্রকল্প এলাকাতে প্রচুর সংখক শ্রমিক রয়েছে ঐ এলাকার কাজ পুরো বৈশাখ মাস বন্ধ করে তাদের কে বোরো ধান কাটার কাজে আসার জন্য বলছি। তারা আসলে শ্রমিক সংকট থাকবে না। দ্রুত পাকা বোরো ধান কেটে কৃষকরা তাদের বাড়িতে নিয়ে যাবে সহজে।

বহুমাত্রিক.কম

Walton Refrigerator Freezer
Walton Refrigerator Freezer