বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রতিদিন নানা খুনের খবর শুনে এখন আমরা প্রায় অভ্যস্ত।পত্রিকার পাতায় আর স্যাটেলাইট টেলিভিশনের চ্যানেল জুড়ে খুনের খবর যেন নৈমিত্তিক ঘটনা ! তবে এখনো কিছু বিশেষ বিশেষ খুনের খবর আমাদের বিস্ময়াভিভূত করে। যেমন- রক্তের সম্পর্কিয় আত্নীয়ের হাতে আপনজনকে খুনের মতো খবরগুলো।
পুত্রের হাতে পিতার খুন, স্বামীর হাতে স্ত্রী`র খুন কিংবা ভাইয়ের হাতে বোনের খুনের মতো খবরগুলো ছিল আমাদের বাঙালী সমাজে প্রায় অবিশ্বাস্য। কালেভদ্রে যখন আত্নীয়ের মধ্যকার রক্তারক্তির খবরগুলো শুনতাম আমরা। এমন কোন ঘটনা যেন সুদূরবর্তী কোন পাষাণপুরীর গল্প। অমানবিক, নিষ্ঠুরগুলো বেশ কয়েদিন আমাদের আচ্ছন্ন করে রাখত।
কিন্তু দুঃখজনক হলেও সত্য যে, আজকাল উপর্যুক্ত খবরগুলো আমাদের কাছে এখন ছিঁচকে চুরি ছিন্তাইয়ের খবরের মতই মামুলি!
প্রথমে এক ঐশীর খবর আমরা যতটা চিন্তাগ্রস্ত ও বেদনাগ্রস্ত করেছিল সেটা যেন আর নেই । সম্প্রতি রংপুরে পরকিয়ার প্রেমের জেরে স্ত্রীর হাতে স্বামী`র খুনের খবরটাও কি তবে আমাদের একটুও ভাবিয়ে তুলেনি ? বেদনাচ্ছন্ন, ভয়ার্ত, সংকিত করেনা ?
রংপুরের বিশেষ জজ আদালতের পিপি ও রংপুর আওয়ামী লীগের আইন বিষয়ক সম্পাদক রথীশ চন্দ্র ভৌমিককে তার স্ত্রী স্নিগ্ধা ভৌমিকের সহায়তায় তার কথিত প্রেমিক কামরুল তহত্যা করে। বুধবার রংপুর র্যাব-১৩ কার্যালয়ে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা বলেন র্যাব মহাপরিচালক বেনজির আহমেদ। নিখোঁজের দুই মাস আগেই হত্যার পরিকল্পনা করা হয়। পরিকল্পনা অনুযায়ী, গত ২৯ মার্চ রাতে নিজ ঘরেই খুন করা হয় রথীশ চন্দ্রকে। কি ভয়াবহ ব্যাপার তাই-না।
পারিবারিক কলহ অবিশ্বাস আর পরকীয়ার মতো অবৈধ সম্পর্কগুলো বিস্তার ঘটতে শুরু করেছে আমাদের সমাজেও। পরিবার প্রথা ভেঙে পড়ার পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া হিসেবেই মূলত এসব ঘটনা ঘটছে।
সভ্যতার প্রচাীনতম সংগঠন পরিবার।
নৃতাত্ত্বিকদের মতে মানব সভ্যতার সূচনালগ্নের সাথে সাথেই পরিবার প্রথার উন্মেষ ঘটে । আমাদের উপমহাদেশীয় সভ্যতা তথা বাঙালি সমাজের একান্নবর্তী পরিবারের অস্তিত্ব ছিল সুসংহত । মানসিক প্রশান্তি, শৃঙ্খলিত যৌন জীবন, পারস্পরিক ভালোবাসা ও স্নেহ চর্চা এবং অর্জিত সহায় সম্পদের উত্তরাধিকারী নিশ্চিত করার ক্ষেত্র পরিবারের ভূমিকা খুবই গুরুত্ববহ।
কিন্তু পরিতাপের বিষয় এই যে, ইউরোপ-আমেরিকায় পরিবার প্রতিষ্ঠান বলতে গেলে ভেঙ্গেই পড়েছে অনেক আগেই। পরকিয়া, লিভ টুগেদার, সন্তান অস্বীকার করার মতো বিষয়গুলো মাথাচাড়া দিয়েছে । ইউরোপ-আমেরকার অন্ধ অনুকরণের ফলে আমাদের সমাজেও বিষবাষ্পের মত ছড়িয়ে পড়ছে অবৈধ সম্পর্ক আর পরিবারবিমুখতার মতো বিষয়গুলো।ফলে স্বামীর হাতে স্ত্রীর, স্ত্রীর হাতে স্বামী খুন কিংবা বাবার হাতে পুত্রের খুনের মতো ঘটনাগুলো বেড়েই চলছে প্রতিনিয়ত।
পাশ্চাত্য সংস্কৃতি গো-গ্রাসে গ্রহণের ফলে আমাদের হাজার বছর পুরনো সংস্কৃতি পরিবার ও সামজিক প্রথাগুলো ভেঙ্গে পড়ছে। এমতাবস্থায় থেকে মু্ক্তির পথ হচ্ছে, পরিবার প্রথা মজবুত করা। পরিবারগুলোতে নৈতিক ও ধর্মীয় অনুশাসন চর্চা করা। পারস্পরিক শ্রদ্ধা, স্নেহ, ভালোবাসার মত মানবিক দিকগুলো চর্চা করা।
আসুন আমরা আমাদের পরিবার প্রতিষ্ঠানগুলো প্রাণবন্ত করে তুলি।কলহমুক্ত প্রীতি ও স্নেহ-ভালোবাসাপূর্ণ পরিবারের মাধ্যমেই সম্ভব ভারসাম্যপূর্ণ জীবন। ফলে আমরা আশ্বস্ত হতে পারবো আপনের হাতে স্বজন হত্যার মতো বিকারগ্রস্ততা থেকে।
লেখক : শিক্ষার্থী, ঢাকা কমার্স কলেজ।
[email protected]
বহুমাত্রিক.কম