Bahumatrik | বহুমাত্রিক

সরকার নিবন্ধিত বিশেষায়িত অনলাইন গণমাধ্যম

বৈশাখ ৪ ১৪৩১, শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪

চা-য়ের দেশের রোমাঞ্চকর দিনগুলি

ড. মো. হুমায়ুন কবীর

প্রকাশিত: ০০:২১, ২ সেপ্টেম্বর ২০১৭

আপডেট: ০০:০০, ৩১ ডিসেম্বর ১৯৯৯

প্রিন্ট:

চা-য়ের দেশের রোমাঞ্চকর দিনগুলি

ছবি: সংগৃহীত

এক.
আমাদের সবার প্রিয় প্রতিষ্ঠান কবি নজরুল বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি ভালো উদাহরণ সৃষ্টি হয়েছে। সেটি হলো যেকোন ছুটির সময় কোথাও না কোথাও বেড়াতে যাওয়া। কখনো দেশে আবার কখনো বিদেশে। দুটি ঈদ, দুর্গা পূজা, শীতকালীন এবং গ্রীষ্মকালীন ইত্যাদি উদযাপনের উদ্দেশ্যে বছরে ৪-৫ বার কমপক্ষে প্রতিবার একসপ্তাহ করে ছুটি পাওয়া যায়। সেই ছুটির সময় ঘরে বসে অলস সময় কাটানোর চেয়ে দেশ-বিদেশ বেড়ানো মনের অবকাশের জন্য খুবই উপকারী। এ কাজটি বিগত ৩-৪ বছর যাবৎ প্রশাসনের উদ্যোগে সফলভাবেই সম্পন্ন করা হয়েছে। সেরকম একটি পরিস্থিতির সৃষ্টি হল ২০১৬ সালের দুর্গাপূজার ছুটিকালীন অক্টোবর মাসের প্রথম সপ্তাহে।

সিদ্ধান্ত হলো এবারে যাওয়া হবে সিলেট অঞ্চলে। সেখানে পবিত্র ভূমি হযরত শাহজালাল (রঃ)-এর মাজার শরিফ জিয়ারত এবং সেইসাথে সেখানকার চা বাগানসহ আরো কিছু দর্শনীয় স্থান পরিদর্শন করা। এগুলো ভ্রমণের একটি বিশেষত্ব থাকে। যেমন একজন যদি একরাতে থাকার ব্যবস্থা করে তবে অন্যজন আয়োজন করে কোন একবেলা খাবারের। এভাবেই সবার উপর দিয়েই কিছু না কিছু ঝড় বয়ে যেতে দেখা যায়। এসব ভ্রমণে প্রশাসনের সর্বোচ্চ কর্তাব্যক্তি থেকে শুরু করে সকল পর্যায়ের শিক্ষক ও কর্মকর্তা এবং ক্ষেত্র বিশেষে তাঁদে পরিবারবর্গ সঙ্গী হয়ে থাকেন। তাতে সকলের মধ্যে পারিবারিক ও ব্যক্তিগত বন্ধন সৃষ্টিতে সহায়ক ভূমিকা পালন করে থাকে।

আমার সিলেট অঞ্চলে আগে কখনো ওভাবে যাওয়া হয়নি। তাই মনে করেছিলাম এবারের সিলেট ভ্রমণে সপরিবারে বেড়াতে যাব। কিন্তু তাতে বাধা হয়ে দেখা দিল আমার সহধর্মিণীর একই সময়ে আরেকটি ভ্রমণ। তিনি যেহেতু একটি কলেজে শিক্ষকতা করেন, সেই কলেজ থেকে পূজার ছুটিতে তাঁর সহকর্মীদের নিয়ে সুন্দরবনসহ বৃহত্তর খুলনা অঞ্চলে বেড়ানোর কথা। তিনিও আমাকে ধরে রেখেছিলেন তাঁদের দলে যেখানে সপরিবারে যাব। কিন্তু কেউই কাউকে পেলাম না। সুন্দরবনেও আমার কখনো যাওয়া হয়নি আবার সিলেটেও না। কিন্তু আমি আগে আমার বিশ্ববিদ্যালয়ের উদ্যোক্তা ও অয়োজকদের কথা দিয়ে দেওয়ায় আমার প্রোগ্রামটি ঠিক রখেছি। আর আমার স্ত্রী তাঁর কলেজের আয়োজকদের কথা দিয়ে দিয়েছেন তিনি যাবেন। ফলে তিনিও তাঁর কথা রেখেছেন। কাজেই মাঝামাঝি কিছু একটা করা যায় কিনা ভাবার জন্য দুজনেই একদিন করে সময় নিলাম। শেষপর্যন্ত সিদ্ধান্ত হলো বড় ছেলে নাফির সামনে সমাপনী পরীক্ষা থাকায় সে কোথায়ও না গিয়ে পাশে তার নানীর বাসায় থাকবে। আমার স্ত্রী একাই যাবেন তাঁর কলেজের টিমের সাথে সুন্দরবনে। আর আমি ছোটছেলে তকিকে নিয়ে নিয়ে সিলেট অঞ্চলে যাব। তাই চূড়ান্ত হলো।

একইরাতে দুজনেরই ট্রাভেল ব্যাগ গোছানো হল। দুইরাত-দুই দিনে ট্যুর নিলাম আমরা। ভিসি স্যারের পরিবার ও ট্রেজারার স্যারের পরিবারের জন্য তাঁদের অফিসিয়াল গাড়ি নিয়েই রওয়ানা দিলেন। কিন্তু আমাদের টিমের অন্য শিক্ষক কর্মকর্তা নিয়ে ২০ জন সহকর্মীদের জন্য দুটি মাইক্রোবাস ভাড়া নেওয়া হলো। সেজন্য প্রথমেই আমি সকাল সকাল ময়মনসিংহের বাসা থেকে তকিকে নিয়ে বেরিয়ে পড়লাম মাইক্রোবাসে উঠব বলে। আর সন্ধ্যায় শুরু হবে আমার স্ত্রী মোস্তাফিজা রুস্তী নিশুর ট্যুর। আমরা ময়মনসিংহ শহরের নতুন বাজারের মোড় থেকে সবাইকে সাথে নিয়ে একসাথে জড়ো হয়ে সকাল ৭টায় সিলেটের উদ্দেশ্যে রওয়ানা করলাম। সিলেট না যাওয়ার কারণে আমি নিজেও একটু উষ্ণতা অনুভব করলাম, কিন্তু তকির খুশি দেখে কে! সেই যখন থেকে সে শুনেছে যে আমার সাথে সিলেটে বেড়াতে যাবে, তখন থেকেই তার ভিতের বাইরে অপরিসীম খুশির বন্যা বইয়ে যাচ্ছে। রাত থেকেই একের পর এক এটা সেটা প্রশ্ন জিজ্ঞেস করে যাচ্ছে। আমাদের যাওয়ার রাস্তা হলো ময়মনসিংহ শম্ভুগঞ্জ ব্রিজ হয়ে কিশোরগঞ্জ সড়ক দিয়ে ভৈরব হয়ে সরাসরি সিলেট পৌঁছা।

দুই.
তকির তখন বয়স মাত্র ছ’বছর। গাড়িতে উঠলে প্রায়ই বমি করার বদভ্যাস। তবে নজির রয়েছে যখন কোন আনন্দভ্রমণে থাকে তখন আবার তা অনেকটা নিয়ন্ত্রণে থাকে। সেই সাহসেই আমি তার মা ছাড়া তাকে আমার সাথে চারদিনের ট্যুরে নিতে রাজি হলাম। তবে যেহেতু বমির বদভ্যাস রয়েছে সেজন্য সাথে কিছু পলিথিন নিলাম। এ যাত্রায় কিশোরগঞ্জ হয়ে ভৈরব পৌঁছে যাচ্ছি তারপরও ইনশাল্লাহ তার বমি হলো না। আমার নিজের গ্রামের বাড়ি যেহেতু কিশোরগঞ্জ জেলায় সেজন্য কিশোরগঞ্জ শহরের বাইপাস এবং আমার নিজ উপজেলার অন্তর্গত পুলেরঘাট বাজারের উপর দিয়ে যাওয়ার সময় তকি এবং গাড়িতে থাকা অন্যান্য সহকর্মীদের আমার বাড়ির অবস্থান জানাচ্ছিলাম। তকিও তখন সবার সামনে বলে উঠল, আমিতো কিছুদিন পর পর আব্বু-আম্মুর সাথে দাদা বাড়িতে বেড়াতে আসি। তকির আবার একটি স্বভাজাত বৈশিষ্ট রয়েছে সহজেই অপরিচিত মানুষকে আপন করে নেওয়ার। তাঁর পাকা পাকা বাক্যবানে ইতোমধ্যে আমাদের গাড়ির সকলে তকির সাথে একটি সদ্ভাব সৃষ্টি হয়ে গিয়েছে। এরইমধ্যে দেখতে দেখতে কটিয়াদী ও বাজিতপুর পার হয়ে ভৈরবে এসে পৌঁছে গেছি আমরা।

তখন সকাল সাড়ে দশ কি এগারোটা। সকলের সাথে পূর্ব ঘোষিত প্রোগ্রাম মতে ভৈরবের ব্রিজ পার হয়ে কোন একটি হোটেলে আমরা সকালের নাস্তা সেরে নেব। তকি এ পথটুকুতে যদিও বমি করেনি কিন্তু মাইক্রো থেকে নামার পর অল্প একটু বমি করে দিল। যাহোক, ভৈরব ব্রিজ পেরিয়ে ভালো একটি হাইওয়ে হোটেলে সকলে ফ্রেশ হয়ে পরোটা, ডিম ভাজা, সবজি, ডাল ইত্যাদি দিয়ে ভালোভাবেই নাস্তাটা সেরে নিলাম। এ নাস্তার খরচ বহন করল ভ্রমণ ব্যবস্থাপনা টিম।

সেখান থেকে আমরা যাত্রা শুরু করলাম পুণ্যভূমি সিলেটের উদ্দেশ্যে। রাস্তায় যেতে যেতে দুধারের ছোট ছোট জলাশয়, নদী, আমন ও জলি ধানের ক্ষেত দেখে বাঙালির চিরায়ত গ্রামীণ সৌন্দর্যের ছবি ফোঁটে উঠে। নিজেদের ব্যবস্থাপনায় গাড়ি নিয়ে চলার একটি বড় সুবিধা হলো যেখানে ইচ্ছা সেখানেই থামানো যায়। তবে একটু সমস্যা দলছুট হওয়ার। কিন্তু সেটাও এখন কোন অসুবিধা নয় কারণ মোবাইলের যুগে যোগাযোগ কোন সমস্যা নয়। দিনটি শুক্রবার থাকায় এবং পুণ্যভূমি হওয়ায় জুমা’র নামাজ যাতে মিস না হয় সেজন্য যাওয়া পথে রাস্তার পাশের এক মসজিদে জুমা’র নামাজ আদায় করে নিলাম। সেইসাথে নামাজ পরবর্তীতে সবাই একসাথে হয়ে একবার চা পান সেরে নিলাম। আর তকির জন্য যথারীতি রইল পটেটো চিপস।

সেখান থেকে চলতে চলতে আমরা দুপুরের মধ্যেই সিলেট শহরে পৌঁছে গেলাম। সেখানে প্রথম কাজটি ছিলো হযরত শাহজালাল (রঃ) এর মাজারের পাশে মানসম্পন্ন একটি আবাসিক হোটেল ঠিক করা। আগে যে হোটেলটি বুকিং দেওয়া হয়েছিল সেটি আমাদের সকলের জন্য মানসম্পন্ন না হওয়ায় সেখানে না উঠে ‘হোটেল ব্রিটানিয়া ইন্টারন্যাশনাল’ নামক একটি তারকা সমৃদ্ধ হোটেলে উঠা হল। হোটেলে উঠে ফ্রেশ হওয়ার পর মূল কাজ ছিলো দুপুরের খাওয়া-দাওয়া করা। উক্ত আবাসিক হোটেলের পাশেই ভালো মানের একটি খাবার হোটেলের সন্ধান পাওয়া গেল। সেখান থেকেই সবাই যার যার পছন্দমতো খাওয়া-দাওয়া সেরে নিলেন। তকিকে আমার হাতে খাইয়ে দিতে হল যা সেও তৃপ্তি সহকারে খেল। তবে পুর্বের রুটিন অনুযায়ী দুপুরের এ খাবারটির খরচ বহন করেছেন ট্রেজারার প্রফেসর এএমএম শামসুর রহমান।

খাওয়ার পর বিকালে রওয়ানা দেওয়া হলো গোয়াইন ঘাটের রাতারগুলে অবস্থিত পানিতে ভাসমান বিশেষ ধরনের ‘সোয়াম্প ফরেস্ট’ দেখার উদ্দেশ্যে। সিলেট শহর থেকে রাতারগুলের দূরত্ব অনেক এবং রাস্তাটি তত ভালো নয়। তারপার জায়গাটিও আমাদের দলের কারোরই পূর্ব পরিচিত নয়। সেজন্য আমাদের সেখানে যেতে যেতেই অনেক সময় পার হয়ে সন্ধ্যা গড়িয়ে রাত হয়ে পড়েছে। সেখানকার পানিতে সাপসহ অনেক স্থলজ ও জলজ বিষাক্ত প্রাণী রয়েছে। নৌকাতে ভ্রমণ করতে হয় জায়গাটি। তাছাড়া রাতে সেখানে কোন লাইটিংয়ের ব্যবস্থা না থাকায় তা দেখার জন্য কোন নৌকা সেখানে যায় না। কাজেই বনের ভিতরে ঢুকতে না পারায় ঘাটেই বসে আমরা কিছু সময় অতিক্রম করে জলাশয়ের সৌন্দর্য উপভোগ করলাম। সেখানে বিশেষ ধরনের গরু দুধের চা-নাস্তা খেয়ে হোটেলে ফিরে আসি।

তিন.
রাতারগুল থেকে আমাদের হোটেল কক্ষে এসেছি তখন সন্ধ্যো সাড়ে সাতটা। সেখান থেকে বাপে-পুতে পাজামা-পাঞ্জাবি পড়ে হযরত শাহজালাল (রঃ) মাজারে যাওয়ার জন্য প্রস্তুতি নেই। মাজার জিয়ারত করব সেজন্য বাসা থেকে যাওয়ার আগেই আমরা দুজনেরই পাজামা-পাঞ্জাবি নিয়েছিলাম। আমার সাথে সহকর্মী ইঞ্জিনিয়ার জহির এবং ইঞ্জিনিয়ার জোবায়েরসহ তকিকে নিয়ে মাজারে হাঁটতে হাঁটতেই চলে গেলাম। আমার সাথে নিজের জন্য টুপি ছিল কিন্তু তকির কোন টুপি না থাকায় সেখানের রাস্তা থেকে তার জন্য একটি টুপি কিনে নিলাম। তবে অল্পের জন্য সেখানে গিয়ে এশার নামাজের জামাত ধরতে পারলাম না। এমনিতে শুক্রবার একটি পবিত্র দিন। তারউপর আবার বড়পীরের মাজার বলে কথা। সেখানে এক ওয়াক্ত নামাজ জামাতের সাথে আদায় করতে পারলে অনেক ফজিলত পাওয়া যেতো। কিন্তু তারপরও তকিসহ আমরা চারজনে মিলে এশার নামাজ আদায় করলাম। সেইসাথে আরো নফল নামাজ আদায় করে আল্লাহর কাছে বিভিন্ন বিষয়ে মা-বাবা, আত্মীয়-স্বজন, বন্ধু-বান্ধব, প্রিয়জনের জন্য দোয়া কামনা করলাম। পরে সেখান থেকে বেরিয়ে শোল-গজার মাছের পুকুর, জালালি কবুতরের বসার ও থাকার স্থান, কাসা ও পিতলের বড় বড় পাতিল যেগুলোর মাধ্যমে বার আউলিয়াগণ এখানে ভেসে ভেসে এসেছিলেন বলে জনশ্রুতি রয়েছে সেগুলো দেখলাম। দেখলাম দেশ-বিদেশের রাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রী, মন্ত্রী, কূটনীতিকসহ জাতীয় ও আন্তর্জাতিকভাবে গুরুত্বপূর্ণ রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ, ভিআইপি ও ভিভিআইপি এলে তাাঁরা যেখানে বসে দোয়া পড়েন সে জায়গাগুলোও।

এরপর বড়পীরের মাজারসহ আরো যে বার আউলিয়া দরবেশ সেখানে এসেছিলেন তাঁদের কবর জিয়ারত করেছি। সেখানে বিভিন্ন নামে দান-খয়রাতও করেছি। রীতি অনুযায়ী যেভাবে জিয়ারত করার কথা ঠিক সেভাবেই দোয়া খায়রাত করেছি। অনককে অবশ্য দেয়ালে টানানো নির্দেশনার বাইরেও নিজেদের মতো বিভিন্ন অঙ্গ-ভঙ্গি করে মোনাজাত ও কান্নকাটি করতে দেখা গেছে। অতঃপর আমরা মাজারের পাশেই মুক্তিযুদ্ধের সর্বাধিনায়ক সেনাবাহিনীন প্রথম প্রধান জেনারেল মোহাম্মদ আতাউল গণি ওসমানীর কবর দেখেছি। সেখানে সিলেট অঞ্চলের বহু গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিবর্গের কবর দেওয়া আছে। একসময়ে বাংলা চলচ্চিত্রের আলোচিত নায়ক সালমান শাহকেও সেখানে সমাধিস্থ করা হয়েছে যার কবর আমরা দেখে এসোিছ। মাজার থেকে ফিরলাম রাত নয়টার দিকে। সেখান থেকে এসে ভাবলাম সিলেটে এসেছি অথচ এখানে কোন কেনাকাটা করব না তা কেমন করে হয়। সেজন্য লোক জনের কাছে জিজ্ঞেস করে একটি অটো টেম্পু রিজার্ভ করে আমি, তকি, জোবায়ের আর জহির চলে গেলাম সিলেটের মনিপুরী কাপড়ের মার্কেটে। সেখান থেকে নিজের জন্য একটি পাঞ্জাবি, স্ত্রীর জন্য একটি শাড়ি এবং আরো কয়েকজন আত্মীয়ের জন্য জটপট কয়েকটি কেনাকাটা করে তড়িৎ হোটেলে ফিরে আসি। কারণ হোটেলে সেদিনে সকলের জন্য রাতের খাবারের দায়িত্ব হলো আমার।

দুপুরে যে হোটেলে খেয়েছিলাম রাতেও একই হোটেলে খাবারের সিদ্ধান্ত হলো। তবে সারাদিন ঘুরে ঘুরে এখানে ওখানে এটা ওটা খেয়ে পেট ভর্তি সবার। তারউপর দুপুরের খাবারও খাওয়া হয়েছে বিকালে। সেজন্য শষপর্যন্ত সৌভাগ্যক্রমে অল্প দাম অর্থাৎ সম্ভবত ৫-৬ হাজার টাকার মধ্যেই খাবারের আমার পালা শেষ করতে পেরেছিলাম। রাতের খাবারের পর তখন রাত এগারোটা। প্রত্যেকে নিজ নিজ কক্ষে পৌঁছে বিশ্রাম ও টিভি দেখে রাতে ঘুমিয়ে পড়লাম। তার আগে ভ্রমণ ব্যবস্থাপনা টিমের কাছ থেকে একটি ঘোষণা শোনা গেল, সকালে আমরা ন’টায় বের হবো। তার আগে হোটেল কর্তৃপক্ষই আমাদেরকে সকালের নাস্তা খাওয়াবে। সেজন্য সকাল আটটার মধ্যে সবাইকে চেকআউট হয়ে নেমে যেতে হবে। রাতে ভালভাবে ঘুমিয়ে সকালে উঠে নিজে বাথরুমের কাজ সেরে তকিকে তুলে তাকেও গোছল করিয়ে নিলাম। কারণ যেহেতু সারাদিন আবারো জার্নির মধ্যেই থাকতে হবে। এখানে আরেকটি বিষয় বলা দরকার যে তকি কিন্তু ভৈরবের পর আর বমি করেনি। দুইএকজন লেট ম্যান ছাড়া অন্যরা মোটামোটি সময় মতোই উপস্থিত হলো হোটেলের নিচে। কিন্তু ফিজিক্যাল ইন্সস্ট্রাক্টার ওমর ফারুক রানা সবসময়ই একটু দেরি করে। তবে এটি তাঁর স্বভাবজাত।

চার.
এবারের সিলেট আগমণের দুটি গুরুত্বপূর্ণ উদ্দেশ্যের একটি ছিলো হযরত শাহজালালের মাজার জিয়ারত এবং অপরটি হলো মৌলভী বাজারের শ্রীমঙ্গলে নব্যস্থাপিত পাঁচ তারকা হোটেল ‘গ্র্যান্ড সুলতানে’ দুইদিন একরাত্রি যাপন করা। প্রথমটি আল্লাহর অশেষ মেহেরবাণীতে সঠিকভাবেই সম্পন্ন করতে পেরেছি। বাকী আছে দ্বিতীয়টি। শ্রীমঙ্গলের গ্র্যান্ড সুলতান হোটেলে আমাদের জন্য অগ্রীম সিট বুকিং দেওয়া আছে। সিলেট শহর থেকে প্রায় তিন ঘণ্টার জার্নি। রাস্তায় যেতে যেতে কিছু চা বাগান এবং সিলেটের ইংল্যান্ড প্রবাসী মানুষদের রাজকীয় বাড়িঘর দেখে দেখে যাচ্ছিলাম। অদ্ভুত এক ব্যাপার। দেখা যায়, পুরো কৃষি জমির ভিতর এমন একেকটি রাজকীয বাড়ি তৈরী করে রেখেছে সেখানে হয়ত কোন লোকই থাকে না, এমনকি সেই বাড়িতে যাওয়ার কোন রাস্তা পর্যন্তও নেই। বেলা বারোটায় আমরা গ্র্যান্ড সুলতানে গিয়ে চেক ইন করি। সেখানে রুম বুঝে নিয়ে হোটেলের পরিবেশ দেখে সত্যিই অবাক হয়েছি। ঢাকার পাঁচ তারকা হোটেলকেও ছাড়িয়েছে এটি। সেখানে হোটেল লনে ওয়েলকাম ড্রিংকস নিয়ে সবাই যার যার মতো কিছুক্ষণের জন্য ফটোসেসনে মেতে উঠেছে।

ফটোসেশন শেষ করে আবার আরেক দাওয়াত রক্ষা করতে যেতে হবে। দাওয়াত হলো আমাদের আরেক সহকর্মী বিশ্ববিদ্যালয়ে ইংরেজি ভাষা ও সাহিত্য বিভাগের অধ্যাপক ড. বিজয় ভূষণ দাসের বাসায়। তাঁর বাসা হলো মৌলভীবাজার জেলার কুলাউড়া উপজেলা শহরে। তাঁর কাছ থেকে আমাদের ভিসি স্যার চেয়ে দাওয়াতটি নিয়েছেন কারণ ড. দাস ভিসি স্যারের চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের সরাসরি ছাত্র। তারপর সাড়ে বারোটায় আবারো আমরা বের হলাম কুলাউড়াতে দুপুরের দাওয়াত খাওয়ার জন্য। সেখানে পৌঁছাতে আমাদের প্রায় তিন ঘণ্টা সময় লেগে যায়। তখন মনে হলো গ্র্যান্ড সুলতানে ঢোকার আগেই আমাদের এ দাওয়ার খাওয়ার কাজটি সের গেলে ঢের ভালো হতো। ড. দাস নিজে একজন নিরামিষভোজী। কিন্তু তারপরও তিনি অনেক আন্তরিকতা দিয়ে নিজে বাজার করে স্কুল শিক্ষিকা বউদি ও তাঁর সদ্য বিবাহিতা মেয়েকে দিয়ে নিরামিষ ও আমিষ সবধরনের খাবার আমাদের জন্য রান্না করিয়ে খাইয়েছেন। যেহেতু অনেকটা পথ অতিক্রম করে অনেক দেরি করে দুপুরের খাবার খেলাম, সেজন্য সবাই খুব ক্ষুধার্ত ছিলাম। আর সেখানে ভালো ভালো আইটেমের খাবার পেয়ে সবাই তৃপ্তি সহকারে খেলাম। আমরা তৃপ্তি সহকারে খেলাম দেখে তাঁরাও খুশি হলেন।

সিলেটের শ্রীমঙ্গলেই সবচেয়ে বেশি চা বাগান। সেজন্য সেখানকার লালাখাল নামক স্থানে সবচেয়ে বেশি বৃষ্টিপাত ঘটার ইতিহাস রয়েছে। সেজন্য দুপুরে যখন শ্রীমঙ্গলের গ্র্যান্ড সুলতান থেকে কুলাউড়ার দিকে যাচ্ছিলাম তখন ছোট ছোট টিলার উপরে কী যে সুন্দর সুন্দর চা বাগান তা দেখলে হৃদয় মন জুড়িয়ে যায়। দুটি পাহাড়ের গা ঘেঁষে মাঝখান দিয়ে রাস্তা। সেই রাস্তা দিয়ে যাওয়ার সময় আঁকা বাঁকা রাস্তায় গাড়ি চলছে উপর-নিচ এবং আবার নিচ-উপর এভাবে। আর বাগানগুলোকে দেখা যাচ্ছে বিছানার মতো সমান হয়ে ঢালে ঢালে মাটিতে রাস্তায় এসে মিশে গিয়েছে। চা বাগানের একটি বিশেষত্ব হলো- চা গাছগুলো পাতা উত্তোলনের জন্য ছেঁটে ছেঁটে রাখতে হয়। কয়েকদিন পর পর নতুন নতুন পাতা ও কুঁড়ি উঠিয়ে ফেলে। চা চাষের জন্য প্রচুর বৃষ্টির প্রয়োজন হয় অথচ সেখানে বৃষ্টি পানি থেমে থাকতে পারবে না। সেজন্যই সবচেয়ে বেশি যেখানে বৃষ্টিস্নাত হয় সেখানে সবচেয়ে বেশি চা চাষ হয়। আবার বৃষ্টির পানি যাতে আটকে থাকতে না পারে সেজন্য পাহাড়ের ঢালেই চা চাষ হয়। চা গাছের জন্য প্রচুর ছায়া প্রদানকারী গাছ লাগানো থাকে মাঠে, যেগুলো বাগানে চা গাছে ছাতির মতো ছায়া প্রদান করে থাকে। পড়ন্ত বিকেলে রোদ-বৃষ্টির লুকোচুরি খেলা দেখতে পেলাম। কুলাউড়া যাওয়ার সময়েই চা বাগানের প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের লীলাখেলা দেখা গেল বেশি।

কিন্তু আসার সময় অর্ধেক রাস্তা আসতে আসতে সন্ধ্যা ঘনিয়ে এলো, যে কারণে আর চা বাগানের সৌন্দর্য দেখা গেলনা। আসার পথে ঝির ঝির বৃষ্টি পড়ছিল সেজন্য আমাদের গাড়ি আস্তে আস্তে শ্রীমঙ্গলে ফিরে এলো। রাস্তায় অন্যান্যদের সাথে বমি করা ছাড়াই তকিও বেশ মজা করল। তকি সবার কাছ থেকে শুনল- পাঁচ তলা, সাত তলা বিশেষ ধরনের চা নাকি পাওয়া যায়। কিন্তু রাত হয়ে যাওয়ায় কোথায় সেই বিখ্যাত চা বিক্রি করে সনাক্ত করতে না পারায় তকিকে তা খওয়ানো গেলনা । তবে তাতে সবাই মিলে কথা দিল যে, পরেরদিন ফেরার পথে যেভাবেই হোক তাকে সেই বিশেষ চায়ের স্বাদ নেওয়ার ব্যবস্থা করা হবে।

পাঁচ.
গ্রান্ড সুলতানে এসে সবাই এর বিরাট এলাকা দেখায় ব্যস্ত হয়ে পড়ল। হোটেলের পাশে লেক, সামনে চা বাগান, একটু সামনে ছোট একটি টিলার উপর গলফ খেলার মাঠ, টেনিস, ব্যাডমিন্টন ইত্যাদি সবকিছু খেলার মাঠ রয়েছে সেখানে। আরো রয়েছে নিজেদের হ্যালিপ্যাড। পাশে ছোট বড়, ঠা-া গরম-সবার উপযোগী হিসেবে রয়েছে সুইমিং পুল। হোটেলের ভিতরে রয়েছে সুন্দর স্যুট, সামলে লন, ভিতরে বড় লবি। দুতলায় রয়েছে আধুনিক সব রাইড সহযোগে জিমনেসিয়াম। হোটেলে এসে যে যার মতো করে এখানে ওখানে ঘুরতে যাচ্ছে, ছবি তুলছে, সুইমং পুলে গোছল করছে, সাঁতার কাটছে ইত্যাদি ইত্যাদি। আমরা যারা সুইমিং করছি না তারা সুইমিং পুলের পাশে বসে বসে দৃশ্য দেখছিলাম। রাত হলেও আলোক পরিকল্পনা এত সুন্দর মনেই হয়নি যে রাত হয়েছে। নিরাপত্তা ব্যবস্থাও খুব কড়াকড়ি। তকি সুইমং পুলের চারিদিকে খুশিতে লাফিয়ে লাফিয়ে বেড়াচ্ছিল।

রাত ন’টা থেকে দশটার মধ্যে আমাদেরকে রাতের খাবার দাবার সম্পন্ন করতে হবে। এবারের ক্লায়েন্ট হলেন পরিকল্পনা ও উন্নয়ন বিভাগের পরিচালক ইঞ্জিনিয়ার হাফিজুর রহমান সাহেব। পুর্বের চুক্তিমত তিনি আমাদের রাতে সেখানে বুফে খাবার খাওয়াবেন। বুফে খাবার খেতে গিয়ে দেখি সেই এলাহি কা-। আইটেমের ছড়াছড়ি। অখচ পেটে ক্ষুধা নেই। যে যা খেতে চায় সব ধরনের আইটেম ধারাবাহিকভাবে সজ্জিত রয়েছে খাবরের টেবিলে। পাউরুটি, পরোটা, ভুনা খিচুরি, পোলাউ, মুরগীর মাংসের কারি, খাসির কারি, গরুর মাংসের কারি, বড় মাছ ভাজা, মাছের ঝোল, ছোট মাছের চচ্চরি, সবজি, ডিম ভাজা, ডিম সেদ্ধ, কয়েক রকমের সালাদ, বিভিন্ন রকম ফলের জুস, সরবত, বিভিন্ন ধরনের ড্রিংকস, ফিরনি, শিমাই, পাতলা ডাল, ঘন ডাল, পায়েস ইত্যাদি এমন কিছু নেই যা টেবিলে দেওয়া নেই। তকির খাওয়ার প্রতি এতটা চাহিদা নেই, সেজন্য ও শুধু দুই পিস পরোটা, এক নলা খিচুরি, একপিছ মুরগির ম,াংস এবং অল্প ডাল তাকে খাইয়ে দিতে হল। অন্যরা যে যার মতো দীর্ঘ সময় নিয়ে খেয়ে যাচ্ছে। এরকম বুফে খাবারের বিভিন্ন প্যাকেজ থাকে। আমাদের প্যাকেজটি ছিল প্রতিজন দেড় হাজার টাকা করে। বুফে খাবারকে এক ধরনের পেটচুক্তি খাবারও বলা যেতে পারে।

হোটেল কক্ষে সব কিছুই দেওয়া থাকে। অর্থাৎ কোন বোর্ডার যদি কোন কিছু সাথে না নিয়েও সেখানে থাকতে যায় তারপরও তার কিছু লাগবে না। কিন্তু থাবারের কয়েকটি জিনিস দেওয়া রয়েছে যাদেও কয়েকটি ফ্রি এবং কয়েকটির মূল্য ধার্য করা রয়েছে। সেটাও আবার নোটিশ হিসেবে দেওয়া আছে। সেগুলোর বাড়তি খেলে আবার চেক আউট করার সময় বিল পরিশোধ করতে হয়। রাতেই ঘোষণা হল সকালের নাস্তাও হোটেচল কর্তৃপক্ষ বুফে হিসেবে দিবে এবং তা সকাল ৮ টা থেকে ১০ টার মধ্যে শেষ করতে হবে। অন্য বাচ্চারা হলে খাওয়ার কথা শুনলেই লাফানো শুরু করত। কিন্তু তকি যখন শুনতে পেল সকালেও এতগুলো আইটেম দিয়ে খেতে হবে। তখন সে আমাকে আশ্চর্য হয়ে প্রশ্ন করল, আব্বু এত সকালে এতকিছু কেমনে খাব। তবে আনন্দেও কথা হলো সে বিশেস যে দুটি জিনিস পছন্দ কওে তার একটি হলো চিপস আর অন্যটি হলো ড্রিংকস সে দুটোই সেখানে ছিল।

ছয়.
সকালে ঘুম থেকে উঠে তকিকে গোছল করিয়ে এবং নিজে গোসল করে রেডি হতে হতে ন’টার মধ্যে নিচে বুফে নাস্তা খাওয়ার জন্য নামতে পেরেছিলাম। সেখানে আস্তে আস্তে একঘণ্টা সময় নিয়ে নাস্তা, তারপর কফি খেয়ে নাস্তা শেষ করলাম। তকি আমার সাথে চিপস, পরোটা, মুরগীর মাংস, ডাল, ভাজি ও ড্রিংস খেল। নাস্তার পর সবাই আবার যে যার মতো বেরিয়ে হোটেলের বিভিন্ন স্থাপনা সামনে নিয়ে ছবি উঠালো। তারপর ১২ টার মধ্যে হোটেল থেকে চেক আউট হয়ে হোটেলের দক্ষিণ দিকে লাউয়াছড়া প্রাকৃতিক বন দেখতে যাই। লাউয়াছড়া বনটি গ্র্যান্ড সুলতান হোটেল থেকে খুব বেশি দূরে নয়। আধা ঘণ্টার মধ্যেই আমরা সেই বনের মধ্যে গিয়ে পৌঁছালাম। সেখানে বানর দেখতে পেলাম। তাছাড়া সেখানে ব্রিটিশ আমলের লাগানো প্রায় দুইশত বছরের পুরাতন কাঠের গাছও এখনো বিদ্যমান যা দেখে অনেক আশ্চর্যই হলাম। সেখানেও নাকি পাঁচ স্তরের চা পাওয়া যায়। কিন্তু তখন বৃষ্টি শুরু হয়ে যাওয়ায় আমরা বেশিক্ষণ বনে থাকতে পারলাম না বলে চা খাওয়া হলো না।

গ্র্যান্ড সুলতান হোটেলের মালিক হলেন সিরাজগঞ্জের এক পীর সাহেবের ছেলে টিপু সুলতান। সেই সুলতান সাহেব শ্রীমঙ্গলের ভিতরেই আরেকটি জায়গায় একটি কমপ্লেক্স করছেন যেখানে একটি বড় মসজিদ নির্মাণ করা হচ্ছে। আমরা সেখানেও তা দেখতে গেলাম। সেখান থেকে ফেরার পথে আমরা তখন ট্যুর শেষে বাড়িতে ফেরার পালা। তকি আমাদের টিমের সর্বকনিষ্ঠ এবং জমানো সদস্য। সে ইতোমধ্যে সবাইকে তার গাওয়া গানও শুনিয়েছে। কারণ সে গান শিখছে এবং তার স্কুল ময়মনসিংহ ক্যান্টনমেন্ট পাবলিক স্কুল এন্ড কলেজে প্রায়ই প্রোগ্রামে অংশগগ্রহণ করে থাকে। এটিও সবাই জেনে গেছে। সেজন্য তাকে বায়না মতো সাত স্তরের চা খাওয়ানোর বিষয়টি এখন ট্যুরের সবার পূরণ করার তাগিদ হয়েছে। তাই ফেরার পথে যেখানে সাতস্তরের বিখ্যাত সেই চা পাওয়া যায় সেখানে নেমে তকিকে সবাই বসে থেকে সেই চা খাইয়েছে। তকি চা খেতে পেয়ে কি যে খুশি হয়েছে তা ভাষায় প্রকাশ করা যাবে না।

ফেরার পথে দুপুরে শ্রীমঙ্গল শহরে একটি হোটেলে খাওয়া সেরে নেব। সেখানে মানসম্পন্ন হোটেল খোঁজছি। একটি হোটেল পেলামও। সেখানে নামতে যাচ্ছি। তকি একটু চঞ্চল ধরনের হওয়ায় সে আগে লাফ দিয়ে নেমে গেল এবং সবাই নামার পর মাইক্রোর দরজায় টান দিয়ে লাগাতে গিয়ে হঠাৎ তার একটি আঙ্গুল দরজায় চাপ খেল। এতে সে জোরে কান্না শুরু করলে সবাই দৌড়ে এসে উল্টা টান দিয়ে দরজা খুলে দিলে সৌভাগ্যক্রমে তার আঙ্গুলটি বেরিয়ে পড়ল। তখন আমার আত্মায় প্রাণ ফিরে পেলাম। কারণ এমনিতেই তার মা সুন্দরবনে বেড়াতে যাওয়ায় আমাদের সাথে না আসাতে সে আমার সাথে বেড়াতে গিয়েছে। এর মাঝেও হাঁসি খুশি থেকে সবাইকে পুরো ট্যুরে মাতিয়ে রেখেছে। এর মধ্যে কোন ধরনের একটা ক্ষতি হয়ে গেলে নিজেকে ক্ষমা করতে পারতাম না। এমনিতে অবশ্য তার মা আমাদের সাথে না থাকলেও মাঝেমধ্যে সুযোগ পেলেই তাকে দিয়ে তার মার সাথে মোবাইলে আলাপ করিয়ে দিয়েছি। সেইসাথে তার বড়ভাই নাফির সাথে, নানা-নানীর সাথে এবং দাদীর সাথে কথা বলাচ্ছি। তাতে সে যে বাসা থেকে দূরে আছে তা মনেই হয়নি।

যাহোক, ছোট হলেও এ দুর্ঘটনাটি ঘটায় তার একটু মুড অফ হয়ে গিয়েছে। জোর করে দুপুরে অল্প কিছু ভাত খাইয়েছি। এরইমধ্যে সে আবার একটি খেলনা গাড়ি কিনে দেওয়ার আবদার করেছিল। খাবারের পর তাকে পাশের একটি দোকানে নিয়ে গিয়ে পছন্দমত এক বক্স গাড়ি কিনে দেওয়াতে তা দিয়ে খেলতে উত্তেজনায় আস্তে আস্তে তার ব্যথার কথা ভুলে গেল এবং আস্তে আস্তে স্বভাবিক হয়ে এল। যাওয়ার সময় আমরা যে পথে যেভাবে গিয়েছিলাম আসার সময়ও একইভাবে একই পথে ফিরে এসেছি। তবে রাস্তায় মাঝে মধ্যে তকির জন্য চিপস এবং আমাদের বড়দের জন্য চা ও হালকা নাস্তা চলেছে। এভাবে আসতে আসতে রাত দশটার মধ্যে ময়মনসিংহ শহরে আমাদের বাসায় এসে পৌঁছালাম। মনে হল যেন স্বর্গ হাতে পেলাম। তাবে এ জার্নিতে সিলেট অঞ্চল সম্পর্কে আমার পূর্বের ধারণা পুরো বদলে গিয়েছে। ছবির মধ্যে যা দেখতাম বাস্তবে আসলে তার চেয়েও সুন্দর। আর তকি যে আনন্দটা করেছে তা কোটি টাকা দিয়েও কেনা যাবেনা। সময় পেলে সপরিবারেই কিংবা গ্রুপে গ্রুপে এমন ট্যুর মাঝেমধ্যে দেওয়া উচিত।

লেখক: ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রার, জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়।

email: [email protected]

বহুমাত্রিক.কম

Walton Refrigerator Freezer
Walton Refrigerator Freezer