ঢাকা : গরম মানেই অস্বস্তি। কপালে চিন্তার ভাজ পড়ে শরীর, মন নিয়ে! রাস্তায় বের হলেই তীব্র রোদের অসহ্য যন্ত্রণা শরীরকে যেমন ডিহাইড্রেশন করে, শরীরের ত্বক পুড়িয়ে নষ্ট করে দেয়। এছাড়া গরমের মৌসুমে অ্যাকনে, র্যাশ ঘামাচির মতো সাধারণ সমস্যা তো থাকেই। বেশির ভাগে নারী-পুরুষের মুখ হয়ে থাকে তৈলাক্ত।
বেশি পানি পান :
প্রতিনিয়ত ২.৫ লিটার পানি পান প্রয়োজন। তবে গরমে দরকার এর থেকে বেশি পরিমাণের পানি পান করা। ঘরের বাইরে গেলে অবশ্যই সঙ্গে রাখুন পানির বোতল। অতিরিক্ত ঘেমে গেলে শরীরের লবণের ঘাটতি মেটাতে স্যালাইন খেতে পারেন। এতে শরীর সতেজ থাকে। মন ভালো থাকবে এবং ত্বকের রুক্ষতা কমবে।
ফলের জুস :
শুধু পানি দিয়েই যে শরীরে পানির ঘাটতি পূরণ হয় তা কিন্তু নয়। এই ঘাটতি পূরণে আপনি প্রতিদিন রাখতে পারেন ফলের জুস। গরমে তরমুজ, ভাঙ্গি, কলা, শসা, লেবুর রস খেতে পারেন। এছাড়া এক লিটার পানিতে কয়েকটা শসার গোল করে কাটা টুকরো, একটা লেবুর রস আর কিছু পুদিনা পাতা ভিজিয়ে রাখুন। সারাদিনে অল্প অল্প করে খাবেন। এতে হজম ক্ষমতাও বাড়বে। চাইলে দু’টুকরো তরমুজও দিতে পারেন এতে।
এক্সফোলিয়েট করুন নিয়মিত :
গরমে প্রায় সব নারীরা সকাল বিকাল কিংবা রাতে ফেসওয়াশ দিয়ে মুখ ধোয়াতে ব্যস্ত থাকে। কিন্তু প্রশ্ন হচ্ছে, গরমে এটাই কি যথেষ্ট? একটা ভাল ফেস স্ক্রাব দিয়ে ত্বক এক্সফোলিয়েট না করলে ধুলো-ময়লা জমে ত্বকের কোষগুলো বন্ধ হয়ে যাবে। এতেই অ্যাকনের সমস্যা বেড়ে যায়। তাছাড়া বাতাসে আর্দ্রতা বাড়লে মুখ বারবার ঘেমে ফ্যাকাসে দেখাবে। তাই মৃত কোষগুলো সরিয়ে ফেলার জন্যেও স্ক্রাবিং প্রয়োজন। কোনও একটা মাইল্ড ফেস স্ক্রাব ব্যবহার করবেন। হয়ে গেলে ভাল করে ধুয়ে মুখে টোনার লাগান। স্পর্শকাতর ত্বক হলে অ্যালকোহল-ফ্রি টোনার ব্যবহার করাই ভাল। তারপর ময়েশ্চারাইজার অবশ্যই লাগাবেন।
অনেকে ভাবেন গরমে ময়েশ্চারাইজারের প্রয়োজন নেই। কিন্তু ধারণাটা ভুল। ত্বকের আর্দ্রতা বজায় না রাখতে পারলে সমস্যা আরও বেড়ে যাবে। যদি আপনার কাছে কোনও ব্যাটারি অপারেটেড ফেস ক্লিনার থাকে, তাহলে সপ্তাহে একদিন স্ক্রাব না করে কোনও ফোম ফেসওয়াশ লাগিয়ে এই ক্লিনার ব্যবহার করতে পারেন। এতেই ত্বক ভালভাবে পরিষ্কার হবে।
রোদ থেকে সাবধান:
গরমের রোদে বেরলে অনেকের ত্বক পুড়ে লালচে র্যাশ বেরিয়ে যায়। এর থেকে বাচতে বাইরে বের হলে, সানস্ক্রিন, গগলস, স্কার্ফ বা ছাতা নেওয়া খুবই গুরুত্বপূর্ণ ও উপকারী। এছাড়া দুপুরে ১২টা থেকে ৩.৩০ মিনিট পর্যন্ত বাইরে না বের হওয়ায় ভালো। এসময় রোদের তীব্রতা অনেক থাকে। বাড়ি ফিরে একটা পাতলা সুতির কাপড়ের কয়েক টুকরো বরফ নিয়ে পোড়া জায়গাগুলোর উপর আলতো করে বুলিয়ে নিন। তারপর মুছে অ্যালোভেরা জেল লাগিয়ে রাখুন। খুব সমস্যা হলে ডার্মাটোলজিস্টের কাছে অবশ্যই যাবেন।
পর্যাপ্ত পরিমাণে সানস্ক্রিন লাগান
অনেকে ভাবেন একবার সানস্ক্রিন লাগিয়ে বাড়ি থেকে বেরলেই সারাদিন চলে যাবে। কিন্তু তীব্র রোদে বেরলে দু’-তিন ঘণ্টা অন্তর সানস্ক্রিন লাগানো প্রয়োজন। সে ক্ষেত্রে একটা সানস্ক্রিন স্প্রে সঙ্গে রাখতে পারেন।
এগুলোয় মেকআপ ঘেঁটে যাবে না। মনে রাখবেন মুখের জন্য এক চা-চামচ পরিমাণে সানস্ক্রিন প্রয়োজন। আর হাত-পা, গলা, পিঠের জন্যে একটা শট গ্লাসে যতটা পরিমাণ সানস্ক্রিন ধরবে, ততটা লাগানো উচিত।
ত্বকের আর্দ্রতা সম্পর্কে সতর্কতা
ময়েশ্চারাইজার লাগাতে ভুলবেন না। গরমে ট্যানিংয়ের সমস্যার জন্যে আমরা বেশি ভাগ কোনও ক্লে মাস্ক বা চারকোল মাস্ক লাগাই। কিন্তু এতে ত্বকের আর্দ্রতা অনেকটা কমে যায়। তাই সপ্তাহে দু’দিন হাইড্রেটিং মাস্ক লাগানো প্রয়োজন। হলুদ, দুধ আর মধু দিয়ে বাড়িতেই এই ধরনে প্যাক বানিয়ে নিতে পারেন। তবে যাঁদের ত্বক তৈলাক্ত তাঁদের দুধে সমস্যা হতে পারে। তার বদলে শসা-অ্যালোভেরার প্যাক লাগালে উপকার পাবেন।
খাদ্যাভ্যাসে পরিবর্তন:
গরমে ত্বক ভালো রাখতে খাদ্যাভাসে পরিবর্তন আনা খুব জরুরী। কেননা শরীর গরম করে তোলে এমন খাবার খেলে অনেকের হজমের সমস্যা দেখা দিতে পারে। এতে ত্বক রুক্ষ করে দেয়। গরমে ঠাণ্ডা জাতীয় খাবার খাওয়া বুদ্ধিমানের কাজ।
সংগৃহীত