ছবি-লেখক
পটুয়াখালী : বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাসে একঘেয়েমি জীবনে কর্মচাঞ্চল্য ফিরিয়ে আনতে দেশের দক্ষিণাঞ্চলের শ্রেষ্ঠ বিদ্যাপীঠ পটুয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের ঐতিহ্যবাহী ধানসিঁড়ি ছাত্র কল্যাণ সমিতি সম্প্রতি আয়োজন করে এক বন্ধুত্বপূর্ণ হাসি, গান আর আনন্দের শিক্ষা সফর।
ছাত্রকল্যাণ সমিতির এ শিক্ষা সফরের গন্তব্যের তালিকায় ছিল কুষ্টিয়া ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস, বিশ্বকবি রবিন্দ্রনাথ ঠাকুরের শিলাইদহ কুঠিবাড়ী, লালন শাহের মাজার ছেউড়িয়া, দেশের বৃহত্তম ভেড়ামারার লালন শাহ সেতু, ঐতিহাসিক মুজিব নগরসহ মাদারীপুর, ফরিদপুর, মাগুরা, ঝিনাইদহ, কুষ্টিয়া, পাবনা, চুয়াডাঙ্গা এবং মেহেরপুরের বিভিন্ন ঐতিহাসিক ও দর্শনীয় স্থান।
বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসের কেন্দ্রীয় বাস স্ট্যান্ডের সামনে বকুলতলা থেকে ভোর ৪টায় শুরু হয় ধানসিঁড়ি ছাত্র কল্যাণ সমিতির শিক্ষার্থীদের আনন্দ ভ্রমণ। শিক্ষা সফরের আনন্দে এদিন অর্ধ শতাধিক শিক্ষার্থী বন্ধুদের কারোই চোখে ঘুম ছিলনা। তবে ক্যাম্পাস থেকে রাত ৩ টায় গাড়ি ছাড়ার কথা থাকলেও সবাই রেডি হয়ে বাসের কাছে আসতেই ভোড় ৪টা বেজে যায়।
ক্যাম্পাস থেকে গাড়ী বরিশাল আসার পথে চলে আড্ডা গান আর কাওয়ালি গাওয়া। বরিশাল সাগরদি থেকে আমাদের সাথে সফরে অংশগ্রহণ করেন আমাদের সমিতির উপদেষ্টা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র বিষয়ক উপদেষ্টার কার্যালয়ের সেকশন অফিসার ও কুষ্টিয়া ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ছাত্র ও সাংবাদিক মোঃ ইমাদুল হক প্রিন্স এবং আমাদের সফরের ক্ষুদে সদস্য শিব্বির। অবশ্য ক্যাম্পাস থেকে আগেই আমাদের সাথে উপদেষ্টা সহকারী অধ্যাপক সুজন কান্তি মালি ও প্রভাষক পারমিতা মজুমদার স্বর্না ছিলেন।
বরিশাল থেকে গাড়ি কুষ্টিয়ার উদ্দেশ্যে ছাড়ার পর সকাল সাড়ে ৭টায় ফরিদপুরের ভাঙ্গায় পৌছালে সেখানে চলে আমাদের সকালের নাস্তা। এখানে বাস থেকে নেমেই প্রথমে চলে নিজেদের গ্রুপ ছবি তোলার হিড়িক। নাস্তা সেড়ে পুরো ৪ ঘন্টা বাসে হৈ হুল্লেড় শেষে দুপুর সাড়ে ১২টায় ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে বাস থামে। আবারো চিরাচরিত আওয়াজ দিয়েই সবাই নেমে যান।
সময়ক্ষেপণ হয়ে যাচ্ছে সমিতির উপদেষ্টা এ বক্তব্য শুনে যে যার মত করে একেবারে এই দৃষ্টিনন্দন ক্যাম্পাসের বিভিন্ন স্থানে ঘুরতে ছড়িয়ে পড়েন। দীর্ঘদিন ক্যাম্পাসের এক ঘেয়েমি জীবনের গ্লানি থেকে মুক্ত হতে সবাই বুক ভরে নিঃশ্বাস নেয়। আমাদের অতিথি নাছরিন সুলতানা পাপড়ি ও উপদেষ্টা পারমিতা মজুমদার স্বর্না উচ্ছ্বসিত ভঙ্গিতে বললেন,‘খুব ভালোই লাগছে’।
দীর্ঘ দিন খাঁচায় ভরা বিষন্নমনা পাখিরা যেন এদিন মুক্তি পেয়েছে। বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক হলের সামনের দীঘির সিঁড়িতে দাড়িয়ে পানি ছিটাছিটি শিক্ষার্থীদের নিয়ে যায় ছোট বেলার হারিয়ে যাওয়ার সেই স্মৃতিতে। এতে বাদ যায় নি সমিতির উপদেষ্টারাও। এই মুহুর্তে আবার অনেককে দেখা যায় ক্যামেরাম্যানের ভূমিকায়। তবে অন্যের ছবি তোলার জন্য নয়। ভাগাভাগি করে নিযেদের ছবি তোলা শেষে ক্যাম্পাসের গুরুত্বপূর্ন সড়ক ও ভবন প্রদক্ষিণ শেষে ইবির স্বনামধন্য শিক্ষক অধ্যাপক ড. নুরুল ইসলাম, সহকারি অধ্যাপক মোঃ আমজাদ, মোঃ তানভির এর আমন্ত্রণে মীর মোশাররফ হোসেন একাডেমিক ভবনে মধ্যাহ্নভোজ সেরে ইবির সহযোগী অধ্যাপক খালিদ মাহমুদ জুয়েল আমাদের সাথে সফরে যোগ দেন।
এবার যাত্রা শুরু হয় কুষ্টিয়া শহরের আমাদের নির্ধারিত হোটেলে। হোটেলে খানিক বিশ্রাম নিয়ে সবাই রওয়ানা হলাম বাউল সাধক লালন শাহের ঐতিহাসিক মাজারে। সেখানে স্মৃতি জাদুঘর ও মাজারে ক্ষাণিক বিশ্রাম নিতেই রাত। মাজারের সব ঘুরে যে যার মত করে একতারা, দোতরাসহ বিভিন্ন সামগ্রী কেনা কাটা করে রওয়ানা হলাম লালন শাহ সেতু ও ভেড়ামারা তাপ বিদ্যুত কেন্দ্র দেখার জন্য এখানে সেতুর ওপারে ঈশ্বরদী পাবনার একাংশ দেখে রাত ১০টায় ফিরে এলাম কুষ্টিয়ার মজমপুরে আমাদের নির্ধারিত আবাসিক হোটেলে।
রাতের খাবার অবশ্য এখান থেকে হোটেলে ওঠার আগে খেয়ে নেই। রাতে হোটেলে চলে আড্ডা গল্প আর গান। রাত শেষে পরদিন সকাল ৯টায় নাস্তা শেষে আমরা রওয়ানা হলাম বিষাদসিন্ধু রচয়িতা মীর মশাররফ হোসেনের বাড়ী ও গড়াই নদী হয়ে শিলাইদহে রবি ঠাকুরের বাড়ী । এখানে পৌছলে এবারে যেন আগের চেয়ে আরো বেসি আনন্দ উপভোগ করা। এখানে বাউলদের গান শুনে রবি ঠাকুরের বিভিন্ন ব্যবহার সামগ্রীর ছবি তুলে রওয়ানা হলাম ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসের উদ্দেশ্যে।
সেখানে আমরা দুপুর ১টায় পৌছে পবিপ্রবির সাবেক রেজিস্ট্রার মোঃ নওয়াব আলী খান এবং ইবির উপাচার্য অধ্যাপক ড. আবদুল হাকিম সরকার, উপ-উপাচার্য অধ্যাপক ড. মোঃ শাহিনুর রহমানের সাথে সাক্ষাত করে ও ছবি তুলে রওয়ানা হলাম মেহেরেপুরের মুজিব নগরের উদ্দেশ্যে।
ঝিনাইদহ, চুয়াডাঙ্গা হয়ে আমরা সন্ধ্যায় মুজিবনগরে পৌছে সবাই দুই দলে বিভক্ত হয়ে আমবাগান, মানচিত্র ও সৌধ দেখে বরিশালের দিকে যাত্রা। এবার ফিরে আসার গল্প। ক্যাম্পাস ছেড়ে যাওয়ার সময় সমিতির উপদেষ্টা মন্ডলি ও শিক্ষার্থীদেরকে যেমনটা দেখাচ্ছিল তার উল্টোটা ঘটে ঠিক ফিরে আসার সময়। সবার চোখে-মুখে একরাশ বিষন্নতা! চলে আসতে চাইলে কি এই মজার মজার জায়গা থেকে আসা যায়!
সহকারী অধ্যাপক সুজন কান্তি মালি, সেকশন অফিসার ইমাদুল হক প্রিন্স, প্রভাষক পারমিতা মজুমদার স্বর্না এবং আমন্ত্রিত অতিথি নাছরিন সুলতানা পাপড়ি বললেন ভ্রমণের এই কয়েক ঘন্টায় আমাদের কাছে মনে হয়েছিল জীবনের সর্বোত্তম সুখের মুহূর্ত।
মাহফুজুর রহমান সবুজ: উপ-পরিচালক, জনসংযোগ ও প্রকাশনা বিভাগ, পটুয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়।
বহুমাত্রিক.কম